দৈহিক ভাবমূর্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্য কখন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়?
আমাদের চিন্তাভাবনায় আমরা কে এবং আমাদের কেমন দেখতে- এই বিষয়টা একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে। আজ সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে আমাদের কেমন দেখতে- সেই প্রশ্নটা অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়াই আমাদের বাধ্য করছে 'নিখুঁত' হতে এবং অন্যের চোখে নিজেদের মূল্যায়ন করার প্রবণতাও জাগিয়ে তুলছে। আমাদের কেমন দেখতে, তা নিয়ে আমরা অধিকাংশ মানুষই একশো শতাংশ সন্তুষ্ট হতে পারি না। নিজেদের পছন্দ অনুসারে আমরা আমাদের বাহ্যিক আবরণের মধ্যে কিছু পরিবর্তন করি ঠিকই, কিন্তু কতদূর সেই পরিবর্তন আনতে আমরা সক্ষম হই?
এই বিষয়টাকে খাদ্যাভ্যাস ও আমাদের মধ্যেকার সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যেমন- এমন অনেক মানুষ থাকে যারা নিজেদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে পুষ্টিকর ও অপুষ্টিকর খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখতে চেষ্টা করে। আবার একদল মানুষ থাকে যারা তাদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে এই ভারসাম্য বজায় রাখতে আদৌ আগ্রহী হয় না। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের খাদ্যতালিকায় ভাজাভুজি বা মশলাদার খাবারদাবার একবারে বর্জন করে। আবার এমন মানুষও থাকে যারা একটুকরো কেক বা বিস্কুটের মতো শুকনো খাবার খেয়েও থাকে। সেই সঙ্গে তারা জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করে বা দু'দিন উপোস করেও কাটিয়ে দেয়। তবে তা মোটেই
স্বাস্থ্যকর নয়।
একইভাবে, আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ থাকে যারা নিজেদের কেমন দেখতে এবং নতুন কোনও মানুষের চোখে নিজেদের আকর্ষণীয় করে তুলতে পছন্দ করে না। অন্যদিকে, কেউ কেউ আবার সক্রিয়ভাবে নিজেদের চেহারা-ছবির বদল ঘটানোর জন্য মুখে ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখে, চুলে রং করে বা মুখে ফেসিয়াল প্রভৃতি করে থাকে। কিন্তু অনেকে আবার নিজেদের চেহারা-ছবিতে বদল আনার জন্য আরও ভিন্ন উপায় গ্রহণ করে, যেমন- প্লাস্টিক সার্জারি, রাইনোপ্লাস্টি (rhinoplasty) প্রভৃতি।
খাবারদাবারের মতো এই ব্যবস্থায় ক্যালোরির মাত্রা মাপা বা বিষয়টা আদৌ পুষ্টিকর কিনা, তা চিন্তাভাবনা করা হয় না। কিন্তু মানুষের মনে যদি বদ্ধমূল ভাবনা জন্মায় তাহলে নিজেকে কেমন দেখতে লাগছে- তা চিন্তা করার সময়ে মানুষের মনে পুষ্টি ও অপুষ্টির ধারণার মধ্যে অনেক অস্পষ্টতা লক্ষ করা যায়।
কী কারণে আমরা নিজেদের চেহারা-ছবি বা দৈহিক ভাবমূর্তিতে বদল আনার চেষ্টা করি?
দেখনদারির দিক থেকে নিজেকে অপছন্দ হওয়ার পিছনে নানারকম কারণ রয়েছে। অথবা নিজেদের স্বাস্থ্য, সুস্থতা, সামাজিক অনুমোদন, নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য, বৃহত্তর জগতের চোখে নিজের আবেদন এবং শক্তির ক্ষেত্রে আমরা কিছু কিছু পরিবর্তন করার চেষ্টা করে থাকি। এর পিছনে আমাদের প্রাথমিকভাবে অন্যদের চোখে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার মনোভাব থাকে। আর এই কাজটা আমরা ততক্ষণ করে থাকি যতক্ষণ না অন্যরা আমাদের উৎকৃষ্ট বলে স্বীকার করে। আসলে আমাদের সামাজিক শর্ত হিসেবে নিজেদের দৈহিক ভাবমূর্তিকে সমাজে অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার অন্যতম গুণ বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে যখন কোনও একজন মানুষের সঙ্গে আমাদের প্রথমবার আলাপ-পরিচয় হয় তখন নিজেদের দৈহিক ভাবমূর্তির বিষয়টা প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে আমাদের মধ্যে নিজেকে সুন্দর, আকর্ষণীয় করে তোলার একপ্রকার পারিপার্শ্বিক চাপ থাকে। এবং এক্ষেত্রে আমরা প্রায়শই নিজেকে উত্তরোত্তর সুন্দর করে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠি।
ব্যাঙ্গালোরের একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ে বলেছিলেন যে তাঁর অধিকাংশ রুগিই মহিলা। আর যাদের বয়স ২০-৩০ এর মধ্যে। এরা মূলত ডেটিং ও সম্বন্ধ করে বিয়ে করার জন্য এমন করে থাকে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে মহিলারা নিজেদের ফর্সা ও ওজন কমাতে উঠে-পড়ে লাগে (এমনকী, যেসব মেয়েদের শারীরিক গঠন সামান্য গোলাগাল ধরনের, কিন্তু মোটেই অতিরিক্ত ওজনবিশিষ্ট নয়)। ত্বক বিশেষজ্ঞ আরও বলেছেন যে, একজন মেয়ে যত বড় হতে শুরু করে তত তার মধ্যে প্রসাধন করার ঝোঁক বাড়ে। ফলে বন্ধুদের চোখে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তারা নানারকম প্রসাধনী দ্রব্য ব্যবহার করা শুরু করে। তাঁর মতে, ''প্রায়শই একজন মধ্যবয়সি মহিলা এই বিষয়ে তাঁর স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের মতামতের চাইতে বন্ধুদের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তারা এমন একটা সামাজিক বৃত্তের মধ্যে বাস করে যেখানে নিজেদের বাহ্যিক আকার-আয়তন নিয়ে মানুষজন একে অপরের বিষয়ে নানারকম মন্তব্য করে এবং এই বিষয়টা তাদের প্রভাবিত করে তোলে। তারপর তারা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য ছিপছিপে হওয়ার প্রক্রিয়ায় মেতে ওঠে।'' পুরুষরা সাধারণত নিজেদের ব্রণ দূর করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়; তাদের মধ্যে বার্ধক্যজনিত চিহ্ন আড়াল করার প্রবণতা কম দেখা যায়।
মানুষ যখন সাজগোজ বা প্রসাধন করার দিকে ঝোঁকে তখন তার মধ্যে নিজের দৈহিক সৌন্দর্যের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা বেশি থাকে। তখন তারা চায় ব্রণ দূর করে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও মুখমণ্ডলের দৃঢ়তা বাড়াতে। নিজেকে অন্যদের চোখে বেশি করে আকর্ষণীয় ও উপস্থাপনযোগ্য করে তোলার জন্য অধিকাংশ মানুষ নিজেদের ত্বকের যত্ন নিতে উঠে-পড়ে লাগে; এর ফলে তারা আরাম ও স্বস্তি পায়। এর প্রভাব তাদের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও পড়ে, যেমন- তারা তাদের কর্মজগতে বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আগের থেকে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে এই প্রক্রিয়া তাদের নিজেদের ভাবমূর্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সাহায্য করে।
'স্বাভাবিক' এবং 'যথাযথ'- এই বিষয় দুটিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়
এই বিষয় দুটো আক্ষরিকভাবে স্পষ্ট নয়। কীভাবে একজন স্থির করবে যে নিজের ভাবমূর্তিতে হঠাৎ বদল আনার জন্য চুল কাটা, রোগা হওয়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো কতখানি প্রয়োজন? এক্ষেত্রে কীভাবে বিভিন্ন বিষয়গুলোর মধ্যে পার্থক্য করা হবে, যেমন- সামাজিক শর্ত এবং চাপ, আমরা কীভাবে নিজেদের দেখতে চাইছি, আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো কী। এগুলোর দ্বারাই কি বাস্তব ও কৃত্রিমতার বিষয়টা নির্ধারণ করা সম্ভব?
ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত 'পরিবর্তন কাউন্সেলিং, ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার'-এর কাউন্সেলর শবরী ভট্টাচার্য বলেছেন, ''সাধারণভাবে মনে করা হয় যদি কোনও একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া কারোর বাহ্যিক আকার-আয়তনের পরিবর্তনে সাহায্য করে তাহলে সেই প্রক্রিয়াই যে বৃহত্তর অর্থে মানুষের আত্মবিশ্বাস বা আত্মনির্ভরতার ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়াবে, তা নয়। সামাজিক কল্যাণের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অনেকসময়ে নিজেদের বিশ্বাসের বদল ঘটানোর চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ তার চেহারা-ছবির মধ্যে পরিবর্তন ঘটাতে চায় তাহলে তা কোনও মানসিক অসুস্থতার উপস্থিতিকে চিহ্নিত করে না।''
তাই বলা হয় যে, দৈহিক ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করলেই হয় না, এই উপসর্গের সঙ্গে আরও অনেক বিষয় যুক্ত থাকে। আর তা নির্ধারণের জন্য কয়েকজন প্রশিক্ষিত ত্বকবিশেষজ্ঞ ও প্রসাধন-বিশেষজ্ঞের (cosmetologists) উপস্থিতি একান্ত জরুরি।
বডি ডিসমরফিক ডিসঅর্ডার বা দেহবিকার সংক্রান্ত সমস্যা
যাদের মনে একনাগাড়ে নিজেদের দৈহিক ভাবমূর্তি বা আকার-আয়তন নিয়ে নানারকম বদ্ধমূল ধারণা ও দোষ-ত্রুটিজজনিত বিষয়গুলো চেপে বসে, তাদের মধ্যেই দেহবিকারজনিত সমস্যা বা বডি ডিসমরফিক ডিসঅর্ডার দেখা দেয়। তারা যেভাবে নিজেদেরকে দেখতে চায় তার সঙ্গে সবসময়ে অন্যদের দেখার মিল থাকে না। এবং নিজেদের মনের বদ্ধমূল ধারণা তাদের ত্রুটি বা খামতিগুলোকে আরও প্রকট করে তোলে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সন্দীপ দেশপাণ্ডে-র স্মৃতিতে এমনই এক বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলের অভিজ্ঞতার কথা উঠে এসেছে। সেই ছেলেটির মুখে ছোট ছোট দাগ ছিল। সে প্রতিদিন অনেকবার ক্যামেরায় নিজের ছবি তুলে সেই দাগগুলো লক্ষ করত। কারণ তার ধারণা হয়েছিল যে সেগুলো আসলে শ্বেতী। একঘণ্টা আগে তোলা ছবি বা একদিন আগে তোলা ছবির সঙ্গে পরে তোলা ছবিগুলোর তুলনা টেনে সে ওই দাগগুলোকে বিভিন্ন কোণ থেকে মাপার চেষ্টাও করত। সে তার বাবা-মাকে মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে নিজের মনের সন্দেহ দূর করার জন্য জানতে চাইতে যে ওই দাগগুলো আকারে বড় হচ্ছে কিনা। যখন তার বাবা-মা ছেলের প্রশ্নের উত্তরে 'না' বলত তখন ছেলেটির মনে হত যে বাবা-মা তাকে বোঝানোর জন্য মিথ্যে আশ্বাস দিচ্ছে। তার মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছিল যে দাগগুলো হয়তো ক্রমশই বেড়ে চলেছে এবং সেই নিয়েই সে সারাদিন চিন্তাভাবনা করত। ছেলেটি কলেজ যাওয়া ছেড়ে দিয়ে বাড়ির ভিতরেই সারাদিন থাকত। অনেক ত্বক-বিশেষজ্ঞের কাছেই সে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের চিকিৎসায় ছেলেটি আদৌ সন্তুষ্ট হতে পারত না। তাই শেষমেশ তাকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গেই পরামর্শ
করতে হয়েছিল।
এই বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেটির সমস্যা বিডিডি বা দেহবিকারজনিত অব্যবস্থার লক্ষণকেই চিহ্নিত করছে। নিজের খামতিগুলোকে মনে বদ্ধমূল করে তোলা; দোষ-ত্রুটিগুলোকে বাড়িয়ে দেখা; চিকিৎসার ক্ষেত্রে যতক্ষণ না মনের সন্তুষ্টি হচ্ছে ততক্ষণ ডাক্তারের কাছে ছুটোছুটি বা ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রভৃতি দেহবিকার অব্যবস্থারই বহিঃপ্রকাশ।
ভারতেও বিডিডি বা দেহবিকারজনিত অব্যবস্থার অস্তিত্ব রয়েছে
ডাক্তার দেশপাণ্ডে-র মতে বিডিডি-কে পশ্চিমি দেশের সমস্যা বলে মনে করা হলেও তা আদৌ সত্যি নয়। এই বিষয়ে তিনি বলেছেন যে তাঁর কাছে চিকিৎসারত এমন রুগি ছিল যাদের নিজের খামতিগুলো তাদের বদ্ধমূল ধারণার সঙ্গে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছিল এবং এই সমস্যা তাদের সারা জীবন ধরে চলেছিল। এমন একজন অল্পবয়সি মানুষ ছিল, যে প্রতিদিন নিয়ম করে তার রক্ত পরীক্ষা করে দেখত চাইত যে রক্তে এমন কোনও খনিজপদার্থ রয়েছে কিনা যার কারণে তার মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এমন একজন অল্পবয়সি মহিলা ছিল, যে প্রতিদিন সকালে একঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাজগোজ করে সন্তুষ্ট হতে চাইত যাতে তার মুখের দাগগুলো আড়াল করা যায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নিজে থেকেই ওষুধপত্র খেত, যা ছিল আরও মারাত্মক প্রবণতা। যখন মানুষের মনে নিজের খামতিগুলো নিয়ে বদ্ধমূল ধারণা গড়ে ওঠে তখন তা মানুষের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং সেই মানুষটিকে ঘিরে যারা থাকে তারাও ক্রমশ দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সেই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ হল বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া।
যেহেতু এই সমস্যার সঙ্গে মানুষের বাহ্যিক আকার-আয়তনগত বদ্ধমূল ধারণা যুক্ত থাকে সেহেতু সমস্যা দেখা দিলে প্রথমে একজন ত্বক-বিশেষজ্ঞ বা রূপচর্চা অথবা প্রসাধন-বিশেষজ্ঞের কাছেই যাওয়া উচিত। প্রায়শই এই স্তরে সমস্যার সঠিক চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয় না। কারণ রূপচর্চাজনিত বা প্রসাধন-বিষয়ক শল্য চিকিৎসা বা কসমেটিক সার্জারির আগে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনস্তত্ত্ববিদের পরামর্শ পাওয়া যায় না। আর তাই রুগির সন্তুষ্টিবিধান করা যায় না বলে তাদের মানসিক অশান্তির প্রতিকার সহজসাধ্য হয় না।
এই বিষয়ে একজন রূপচর্চা বা প্রসাধন-বিশেষজ্ঞ বলেছেন (কসমেটোলজিস্ট), ''আমাদের ব্যবহৃত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা রুগিদের ৫০-৬০ শতাংশ হারে সুস্থ করে তোলার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে পারি, কিন্তু সেখানে এমন কয়েকজন মানুষ থাকে যারা ১০০ শতাংশ সুস্থ হওয়ার জন্য আমাদের জোর করে। অথবা তারা নানারকম পদ্ধতি বারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অবলম্বন করে। এই বিষয়টা আমার মনে কিছুটা বিপদের ইঙ্গিত দেয়। কারণ রুগিদের এই অসন্তুষ্টির পিছনে অন্য কোনও কারণ থাকে বলে আমার মনে হয়। আর দিনের শেষে এবিষয়টা একজন মানুষের নীতিবোধে আঘাত করে বলে আমার মনে হয়। যেমন- আপনি অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করলেন বা রুগিদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলে তাদের সমস্যাটা সঠিকভাবে বুঝতে সময় দিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, একজন কসমেটোলজিস্ট-এর কাজের ক্ষেত্রে এরকম নৈতিকতা বা নীতিবোধের দৃষ্টান্ত নেই। তাই তাদের এমন মানুষের চিকিৎসা করা দরকার যারা এই সমস্যা সমাধানের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতি মেনে চলবে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারকে কোনও প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা করা যাবে না।''
কিন্তু এই সমস্যার সমাধান তাহলে কী?
একজন মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের মতে যদি রুগিরা চিকিৎসার একটা পদ্ধতি বা ধাপ মেনে চলে তাদের আকঙ্ক্ষিত বাহ্যিক আকার-আয়তন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে তাহলে বুঝতে হবে যে তাদের আত্মবিশ্বাস বা আত্মনির্ভরতাজনিত সমস্যার গভীরতা তেমন নেই। কিন্তু যদি কোনও মানুষ নিজের দৈহিক ভাবমূর্তি বদল করার জন্য নানারকম পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া ঘুরিয়া-ফিরিয়ে ব্যবহার করতে চায় তাহলে সেই সমস্যা সমাধানের জন্য একজন মনস্তত্ত্ববিদের সাহায্য একান্তই জরুরি হয়ে ওঠে। এসব ক্ষেত্রেই কসমেটোলজিস্ট বা প্লাস্টিক সার্জনরা তাঁদের কাজ শুরু করার আগে রুগিকে একজন মনস্তত্ত্ববিদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য সুপারিশ করেন। আসলে একটা স্বচ্ছ মূল্যায়নের জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কাউন্সেলর ভট্টাচার্য-র মতে, ''যদি মানুষ তার বাহ্যিক আকার-আয়তন নিয়ে খুশি হতে না পারে এবং সেই কারণে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে নিজের খামতিগুলোকে দূর করতে চায় তাহলে ওই বিষয়টা সম্পর্কে তার অনেক কিছু জানার প্রয়োজন থাকে। যেমন- এর মাধ্যমে সে কি অনেকদিন পর্যন্ত নিজের বাহ্যিক আকার-আয়তনের সৌন্দর্য অটুট রাখতে পারবে? নানারকম পদ্ধতি বারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে রুগির মনে নিজেকে সুস্থ করে তোলার আশা জাগলেও, একটা চিন্তার বিষয় থেকে যায়। আর তা হল- তার আত্মবিশ্বাস বা আত্মনির্ভরতা অথবা ইতিবাচক দৈহিক ভাবমূর্তির বিষয়, যা একেবারেই তার নিজস্বতা হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি।''