মানসিক চাপের জন্য কি আমার ফাইব্রোমায়ালজিয়া নামক সমস্যার অবনতি ঘটতে পারে?
ফাইব্রোমায়ালজিয়া বলতে কী বোঝায়?
এটি একধরনের লাগাতার অসুস্থতা, যার ফলে সাধারণভাবে একপ্রকার ক্লান্তি ও ব্যথা-বেদনার বোধ জাগে। এই সমস্যার ফলে যে ব্যথা বা বেদনার সৃষ্টি হয় তার পিছনে আপাতভাবে কোনও বাহ্যিক কারণ থাকে না এবং এর ফলে সঠিক রোগ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়।
ফাইব্রোমায়ালজিয়া নামক অসুখে কী কী সমস্যা দেখা যায়?
যদি দেখা যায় যে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো একনাগাড়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে চলছে তাহলে একজন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জেনে নেওয়া প্রয়োজন যে সমস্যাগুলো ফাইব্রোমায়ালজিয়ার কারণে হচ্ছে কিনা-
সাধারণভাবে ক্লান্ত বা অবসন্ন বোধ
রাতে ভালো ঘুম হওয়ার পরেও ক্লান্ত বোধ করা
মাথাব্যথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে বেদনা উপলব্ধি করা
বারবার বিষণ্ণ হওয়া বা দুশ্চিন্তা করা
দেহ নরম বা মসৃণ হয়ে যাওয়া
কাজে মনোযোগ বা মনঃসংযোগ ব্যাহত হওয়া
পরিপাক বা হজমের সমস্যা দেখা দেওয়া
ফাইব্রোমায়ালজিয়া নামক অসুখের প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব মানুষ গভীর মানসিক চাপ ও আতঙ্কের শিকার হয় তাদের ক্ষেত্রে ফাইব্রোমায়ালজিয়া দেখা যায়। এছাড়া এই সমস্যার ক্ষেত্রে বংশগত বা জিনের ভূমিকাও রয়েছে।
এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা কিছুতেই বুঝতে পারে না যে কীভাবে একজন স্বাস্থ্যবান মানুষ সাধারণ কাজকর্ম করতে অক্ষম হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রায়শই কোনও বাহ্যিক কারণ ধরা পড়ে না। যার ফলে রোগাক্রান্ত মানুষের মেজাজ-মর্জিগত পরিস্থিতি তার চারপাশে থাকা লোকজন বুঝতে
ভুল করে।
কীভাবে ফাইব্রোমায়ালজিয়া একজন মানুষের মানসিক সুস্থতায় ব্যাঘাত ঘটায়?
মানুষের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সমস্যার প্রভাব পড়ে। যেমন- এর ফলে মানুষের মধ্যে যে শারীরিক যন্ত্রণা ও ক্লান্তি জন্মায় তা তাকে তার জীবনের দৈনন্দিন কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। আর এভাবেই একজন মানুষের মানসিক চাপ বাড়ে ও আত্মনির্ভরতা কমে যায়। মানুষ তখন তার দায়িত্ব, কর্তব্যগুলোও ঠিকমতো পালন করতে পারে না।
গুরগাঁও-এর মেদান্তা হাসপাতালের নিউরোসাইকোলজিস্ট ডাক্তার নাতাশা খুল্লার মতে, ''ফাইব্রোমায়ালজিয়ার অবশ্যই একটা মানসিক ভিত্তি রয়েছে। কারণ একজন মানুষ ব্যথা অনুভব করছে অথচ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনও আঘাত বা ক্ষত ধরা পড়ছে না। সেই সঙ্গে ব্যথাটা প্রকৃত, গুরুতর এবং অনেকসময়ে তা অসহনীয় বোধ হচ্ছে। এমনকী এর ফলে বিছানা ছেড়ে ওঠাটাই কঠিন হয়ে দেখা দেয়। তবে এইধরনের সমস্যায় দশজনের মধ্যে ন'জনের ক্ষেত্রেই ফাইব্রোমায়ালজিয়া নামক অসুখ নির্ধারণ করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অধিকাংশ মানুষ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং সঠিক রোগ চিহ্নিত হওয়ার আগে তাদের প্রায় বছরখানেক ধরে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হয়।''
ফাইব্রোমায়ালজিয়ার সঙ্গে প্রায়শই মানুষের মানসিক চাপের লক্ষণগুলোর মিল দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, চাপের ফলে এই রোগের লক্ষণগুলোর আরও অবনতি হতে দেখা যায়; এবং চাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়েই লক্ষণগুলোও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হয়। ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ফলে দশজনের মধ্যে ন'জনের ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদের লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং দশজনের মধ্যে অন্ততপক্ষে ছ'জন তাদের জীবদ্দশায় গুরুতর অবসাদজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
ফাইব্রোমায়ালজিয়া এবং নিজের সুরক্ষা
ফাইব্রোমায়ালজিয়া একেবারে সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা তেমন না থাকলেও সঠিক চিকিৎসার ফলে এই রোগের লক্ষণগুলো অনেক নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং ব্যথাও দূর করা সম্ভব হয়। যদি কারোর মধ্যে ফাইব্রোমায়ালজিয়া নামক অসুখ চিহ্নিত হয় তাহলে ডাক্তার তার যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করে ও রুগির জীবনযাত্রার বদল ঘটিয়ে রোগের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারেন।
চিকিৎসার পদ্ধতি হিসেবে ব্যথা-নিরোধক এবং সেই সঙ্গে কম মাত্রার অবসাদ-বিরোধী ওষুধ প্রয়োগের ব্যবস্থাও রয়েছে। থেরাপির সাহায্যেও রুগি তার মানসিক চাপের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয় এবং তারপর রোগের লক্ষণগুলোও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এছাড়াও প্রয়োজন হয়-
একজন মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করা এবং নিয়মিত থেরাপি করানো
ডাক্তারের সঙ্গে দৈনন্দিন শরীরচর্চাজনিত রুটিন নিয়ে কথাবার্তা বলা এবং সেই রুটিন মেনে চলা। শরীরচর্চা দৈহিক যন্ত্রণা দূর করতে সাহায্য করে। যদি কোনও কারণে কোনও একদিন শরীরচর্চা করা না হয় তাহলে অন্যভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন এবং বাড়ির চারপাশে হাঁটাহাঁটি করা জরুরি
স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন
চারপাশের মানুষের সহযোগিতা দরকার। তাই এমন বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যের উপস্থিতি দরকার যারা রুগিকে বাস্তবে এবং মানসিকভাবে প্রয়োজনমতো সাহায্য করতে পারে
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। রুগির ডাক্তার তাকে বোঝাতে পারে যে কী পরিস্থিতিতে তার মানসিক চাপ দেখা দিচ্ছে এবং সেই চাপের মোকাবিলা কীভাবে করা যায় সে সম্পর্কেও ডাক্তার রুগিকে সঠিক দিশা দেখাতে পারে।
স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস করা একান্ত প্রয়োজন। সবরকম যান্ত্রিক কৌশল রুগির শোওয়ার ঘর থেকে দূরে রাখা জরুরি। তার পরিবর্তে ঘুমানোর আগে এমন কিছু করা দরকার যার ফলে মন শান্ত থাকে এবং ঘুম ভালো হয়।
এই প্রবন্ধ লেখার জন্য দিল্লির মেদান্তা হাসপাতালের সিনিয়র নিউরোসাইকোলজিস্ট ডাক্তার নাতাশা খুল্লার কুমারের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।