কীভাবে আমি আমার কিশোরী মেয়েকে সাহায্য করব?

কীভাবে আমি আমার কিশোরী মেয়েকে সাহায্য করব?

আপনার মেয়ে কি সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে? তার আচার-ব্যবহারের সঙ্গে আপনার কি মানিয়ে নিতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে? আপনি কি তার মনে জমে থাকা সব প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসার সদুত্তর দিতে পারছেন? বয়ঃসন্ধি এবং কৈশোরকালীন মেয়েদের আচার-আচরণ বোঝা ও তাদের সাহায্য করার বিষয়টি বাবা-মায়ের কাছে প্রায়শই বেশ ভয়াবহ ও কঠিন কাজ বলে মনে হয়। তাই সেই বিষয়ে এই প্রবন্ধে ব্যাঙ্গালোরের প্রখ্যাত কাউন্সেলর মল্লিকা শর্মা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:

  • বয়ঃসন্ধির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা: এমন কিছু অভিভাবক থাকেন, যাঁরা তাঁদের সন্তানের সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন। এই সমস্যাটা বিশেষ করে সেই সব অভিভাবকদের ক্ষেত্রেই ঘটতে দেখা যায়, যারা তাদের নিজেদের বাবা-মায়ের মুখ থেকে ছোটবেলায় বয়ঃসন্ধি  সম্পর্কে কোনও কথাবার্তা শোনেনি। অথবা তাদের অভিভাবকরা তাদের সঙ্গে এই নিয়ে কোনও আলাপ-আলোচনা করেনি। কিন্তু মেয়ের মধ্যে যখনই শারীরিক বা বাহ্যিক পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে তখনই অভিভাবকদের, বিশেষত মায়েদের উচিত মেয়ের সঙ্গে বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে খোলাখুলি কথাবার্তা বলা। এটা আপনার মেয়েকে নিজের শারীরিক বদলগুলির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে এবং সে মানসিক দিক থেকেও স্বচ্ছন্দ বোধ করবে।

  • মেয়ের কথা বোঝার জন্য শুনুন, উত্তর দেওয়ার জন্য না  মেয়ের অনুভূতিগুলি শুনতে হবে। যদি সে কথা বলতে চায় তাহলে নিজে যা করছেন তা থামিয়ে অভিভাবককে খুব মনোযোগ সহকারে তার কথা শুনতে হবে। কর্মব্যস্ততার মধ্যেই কিছু সময় বের করে নিয়ে অভিভাবককে তার শুনতে হবে। যদি দেখা যায় যে মেয়ে কোনও বিষয় নিয়ে খুব চিন্তা করছে তাহলে তাকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজন তার কথা শোনা এবং যথাযথ উত্তর দেওয়া।   মেয়েকে নিঃশর্ত ভাবে ভালোবাসতে হবে ও স্বীকার করতে হবে: মেয়ের আচার-আচরণ সম্পর্কে সমালোচনা করবেন না বা তার বিরুদ্ধ মতামত দেবেন না। চেষ্টা করতে হবে মেয়ের আচার-আচরণগত দোষত্রুটিগুলোর চেয়ে তার অন্তর্নিহিত উজ্জ্বল সম্ভাবনাগুলোকে বড় করে দেখতে। যেমন- তার ভিতরের গুণ বা ভালো অভ্যাসগুলোর প্রশংসা করা জরুরি। অর্থাৎ, তার মধ্যে যে সহানুভূতির মনোভাব রয়েছে, বা তার নেতৃত্বদানের ক্ষমতা অথবা তার অন্যান্য গুণগুলোর প্রশংসা করা দরকার। অন্যদিকে মেয়ে যে কাজটা ভালো পারে না বা তার দুর্বলতার দিকগুলো নিয়ে বেশি আলাপ-আলোচনা না করাই বাঞ্ছনীয়।

  • ফলাফলের চেয়ে মেয়ের প্রচেষ্টা ও দক্ষতাগুলোকেই স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন: শুধুমাত্র পড়াশোনার ফলাফল দিয়েই মেয়ের যোগ্যতা বিচার করা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বের অন্যান্য দিকগুলোকেও খতিয়ে দেখতে হবে। যেমন- সে যদি পরীক্ষায় আশানুরূপ নম্বর না পায় তাহলে তাকে ছোট করা উচিত নয়। তার চেষ্টাটাকে স্বীকৃতি জানানো এক্ষেত্রে একান্ত জরুরি। যদি মেয়েটি লেখাপড়ায় তেমন ভালো নাও হয়, তাহলে তার অন্য প্রতিভা বা গুণকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে তার প্রতিভার যাতে আরও বিকাশ হয় সেই জন্য উৎসাহ দিতে হবে।   মনে রাখতে হবে নিখুঁত অভিভাবক বলে কিছু নেই: কৈশোর বা বয়ঃসন্ধির ছেলে-মেয়েদের অভিভাবকত্ব করা মোটেই সহজ কাজ নয়। কিন্তু মেয়ের বিভিন্ন কৃতিত্ব, যেমন- পরীক্ষার নম্বর, মেডেল বা ট্রফি, এমনকী তাকে কেমন দেখতে প্রভৃতি দিয়ে অভিভাবক হিসেবে কারোরই নিজেকে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। একজন প্রকৃত অভিভাবকের সবসময়ে উচিত মেয়ের সঙ্গে সঠিক যোগাযোগ রাখা, তাকে সহায়তা করা, উৎসাহ দেওয়া এবং তার প্রতি বিশ্বাসভাজন থাকা। বয়ঃসন্ধির মেয়েদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকদের বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলা একান্তই জরুরি।  

  • অভিভাবক হিসেবে আপনি আপনার মেয়ের চোখে আদর্শ হয়ে উঠুন:

ক. অভিভাবক হিসেবে মেয়েকে দেখাতে চেষ্টা করুন যে আপনি আপনার শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছেন, নিয়মিত শরীর চর্চা করছেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন এবং পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছেন।

খ. পরিবারের সদস্য, বন্ধু এবং সহকর্মীদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রেখে চলা জরুরি। এসব থেকে মেয়েটি শিখবে সম্মান করতে শেখা, সহানুভূতিশীল হওয়া এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে জীবনযাপন করা। যেমন- অভিভাবক হিসেবে সামাজিক ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে অন্যের সঙ্গে আলাপচারিতা করছেন তা দেখে আপনার মেয়েও তেমনটিই শিখবে।

গ. অস্বস্তিকর অনুভূতি এবং খারাপ মেজাজের মোকাবিলা করতে স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন। নিজেদের অনুভূতি এবং চিন্তার স্বীকৃতি জরুরি। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল নিজের প্রয়োজনীয়তা এবং চাহিদার সঙ্গে ইতিবাচক যোগাযোগ গড়ে তোলা।

  • মেয়েদের বন্ধুবান্ধব সম্পর্কে যথার্থ আগ্রহ দেখানো দরকার: মেয়ের বন্ধুবান্ধবকে নিজের বাড়িতে ডাকতে হবে। এভাবে একজন অভিভাবক তার মেয়ের সামাজিক মেলামেশার বা সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে ওয়াকিবহাল থাকতে পারবেন। এছাড়া মেয়ের বন্ধুবান্ধবদের গুরুত্ব দিলে মেয়ের মধ্যেও আত্মসচেতনতা গড়ে উঠবে।
     

  • মেয়ের সঙ্গে নানারকমের বিষয়, যেমন - সামাজিক সম্পর্ক, যৌনতা এবং যৌন সম্পর্ক নিয়ে খোলাখুলি ও স্বস্তিকর আলোচনা করা জরুরি। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে এই আলোচনার সময়ে মেয়ের মনোভাব কীরূপ হচ্ছে।

Related Stories

No stories found.
logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org