আমার বয়স্ক অভিভাবকরা সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন। এটা কি চিন্তার বিষয়?

আমার বয়স্ক অভিভাবকরা সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন। এটা কি চিন্তার বিষয়?

Published on

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মধ্যে দৈহিক দিক থেকে অনেক পরিবর্তন আসে। আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়। এ কারণে বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে চেতনাগত জটিলতা এবং ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। তবে স্বাভাবিকভাবে বয়সজনিত কারণে ভুলে যাওয়া এবং অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়া নামক অসুখের জন্য ভুলে যাওয়ার যে সমস্যা হয় তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

একজন পরিপূর্ণ মানুষের জীবনে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশের যে প্রক্রিয়া ঘটে তা রোধ করা যায় না। যেমন- বয়স্ক মানুষরা তাদের চশমা বা চাবি কোথায় রেখেছে তা প্রায়শই ভুলে যেতে পারে বা চেনা ব্যক্তির নাম তারা মনে রাখতে পারে না। তবে স্মৃতিশক্তির এই পরিবর্তন মানুষের দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে না। এমনকী, তাদের সক্ষমতা, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা বা সামাজিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা হয় না।

কখন স্মৃতিলোপের সমস্যা ডিমেনশিয়ার লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায় -

সব ভুলে যাওয়ার সমস্যাই কিন্তু বয়সের কারণে হয় না। যখন কারোর মধ্যে ডিমেনশিয়ার সমস্যা দেখা দেয় তখন তার স্মৃতি ছাড়াও অন্যান্য জ্ঞান বা চেতনাজনিত জটিলতা যেমন- শেখা, অভিমুখ, ভাষা, বোধবুদ্ধি, পরিকল্পনা, সমস্যার সমাধান এবং বিচার-বিবেচনার শক্তি হ্রাস পায়। যদি অভিভাবকদের মধ্যে নীচের সমস্যাগুলো দেখা যায় তাহলে তার প্রতিকারের জন্য অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি-

  • মাঝে মাঝে বা বারেবারে কারোর নাম, কোনও ঘটনা বা অন্যান্য কিছু বিষয় ভুলে যাওয়া।

  • সদ্য ঘটা কোনও ঘটনা এবং বিষয় মনে করতে না পারা, যেমন- জলখাবার বা প্রাতরাশ করেও ভুলে যাওয়া।

  • পরিচিত কারোর নাম বা ঘটনা ঠিকমতো মনে করতে না পারা, যেমন- নাতি বা নাতনির নাম ভুলে যাওয়া অথবা আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে হবে তা মনে থাকলেও কোন আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে হবে তা মনে করতে না পারা।

  • কেউ ধরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও কারোর নাম, জায়গার নাম বা কোনও ঘটনার কথা মনে করতে না পারা।

  • কথাবার্তার সঙ্গে সম্পর্কজনিত সাধারণ শব্দ মনে করতে না পারা

  • হঠাৎ করে আচার-আচরণ এবং মেজাজ-মর্জির বদল ঘটা বা মানসিক উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া।

  • ভুলে যাওয়ার জন্য দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে সমস্যা।

  • বেঠিক জায়গায় ভুলভাল জিনিসপত্র রাখা, যেমন - পয়সার ব্যাগ রান্নাঘরে বা ফ্রিজে রেখে দেওয়া।

  • পরিচিত জায়গায় হাঁটাহাঁটি বা গাড়ি চালানোর সময়ে রাস্তা চিন্তা না পারা বা সঠিক রাস্তা ভুলে যাওয়া।

  • কোনও জায়গা ঠিকঠাক চিহ্নিত করতে না পারা বা নির্দেশ মেনে চলতে না পারা।

  • সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়া।

এই লক্ষণগুলোর মধ্যে দুই বা তার বেশি লক্ষণ দেখা দিলে তা ডিমেনশিয়াজনিত স্মৃতিলোপ বলে চিহ্নিত করা হয়।

যদি ডিমেনশিয়ার লক্ষণ দেখা যায় তাহলে কী উপায় অবলম্বন করতে হবে -

ডিমেনশিয়া মস্তিষ্কের এমন একটা ক্রমবর্ধমান এবং অবক্ষয়িত অসুখ যা মানুষের চেতনা বিশেষ করে স্মৃতিশক্তিতে আঘাত করে। এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এবং প্রতিরোধ করতে পারলে ঝুঁকি অনেক কমে যায়। সেই সঙ্গে আস্তে আস্তে ডিমেনশিয়ার লক্ষণগুলোও সরে যেতে থাকে। যদি বাড়ির বয়স্ক মানুষের মধ্যে ডিমেনশিয়াজনিত ভুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে সমস্যা দূর করার চেষ্টা করা জরুরি।

ভুলে যাওয়ার অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কোলেস্টেরল, অবসাদ, উদ্বেগ, ভিটামিন বি-র অভাব এবং হাইপোথাইরয়েডিসম্‌। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এই কারণগুলোর জন্য ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিম্নলিখত উপায়ে গুরুতর স্মৃতিলোপের সমস্যার প্রতিকার সম্ভব -

  • স্মৃতিলোপের সম্ভাব্য কারণগুলো যেমন- ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কোলেস্টেরল, হাইপারথাইরয়েডিসম এবং ভিটামিন বি-র অভাব দূর করার চেষ্টা করা জরুরি।

  • জীবনযাত্রার মানের উন্নতি যেমন- মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান বা মদ্যপান এড়ানো প্রয়োজন।

  • বুদ্ধিমূলক কাজে মনোনিবেশ করতে হবে, যেমন- শব্দজব্দ বা শব্দছক সমাধান করা, দাবাজাতীয় খেলা এবং পছন্দের কাজ করা বাড়াতে হবে।

  • মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ঠিক রাখার জন্য শারীরিকভাবে পরিশ্রম করা খুবই ফলদায়ক। এর সাহায্যে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণ থাকে।

  • খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবারদাবার যেমন- ফল, শাকসব্জি এবং ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার রাখা একান্ত প্রয়োজনীয়।

নিমহানসের জেরিয়াট্রিক সাইকিয়াট্রিক বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার পি টি শিবকুমারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রবন্ধটি লেখা হয়েছে।  

logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org