প্রসব পরবর্তী পর্যায়ে নিদ্রা বিকার
একটি বাচ্চার জন্ম দেওয়ার পর একজন মা শারীরিক এবং মানসিক ভাবে খুবই ক্লান্ত ও অবসন্ন বোধ করে। প্রসব-বেদনা থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়ার জন্য এইসময় মহিলাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং আরামের প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, অধিকাংশ মা-ই এইসময় যথাযথ বিশ্রাম বা ঘুমের সুযোগ পায় না। এর ফলে তাদের মানসিক অবসাদও কিছুতেই কাটতে চায় না। আসলে সদ্যোজাত সন্তানের স্বাস্থ্যের চিন্তাই মায়েদের মানসিক উদ্বেগকে বাড়িয়ে দেয়। বাচ্চা ঠিকঠাক ঘুমাচ্ছে কি না — এই ভাবনাই মায়ের মাথায় সারাক্ষণ ঘুরপাক খেতে থাকে। আর এর ফলেই একজন মা উপযুক্ত বিশ্রাম বা অবসর ভোগ করতে পারে না। কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চারাও মায়েদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। এই পরিস্থিতিকে অধিকাংশ মায়েরাই মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে চিত্রটা বদলে যায়। আর তাই এইসময় মায়েরা অনিদ্রাজনিত সমস্যায় ভুগতে শুরু করে।
পোস্ট-পার্টাম ইনসমনিয়া বা প্রসবোত্তর নিদ্রাহীনতা এমন একটি সমস্যা যার ফলে একজন মা অত্যন্ত ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও ঘুমাতে পারে না। এমনকী, বাচ্চা গভীর ভাবে ঘুমালেও মায়ের চোখে কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না। ঘুমন্ত শিশুর দিকে মা একদৃষ্টে চেয়ে থাকে। কারণ, মায়েরা ভাবে যে,যদি তারা ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পাবে না। অনেক সময় এমনও দেখা যায় যে, মা হয়তো কোনও কারণে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সে আচমকাই ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠে বসে পড়েছে। কারণ এই অবস্থায় সেই মা কল্পনা করছে যে, তার বাচ্চা ঘুম থেকে উঠে কাঁদছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেই বাচ্চাটি তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আসলে প্রসবোত্তর অনিদ্রাজনিত সমস্যা প্রসব-পরবর্তী অবসাদেরই আর এক রূপ। অর্থাৎ রোগ দুটির প্রকৃতি ভিন্ন হলেও, এরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।
এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়গুলি হল —
যদি কোনও মহিলা প্রসব-পরবর্তী সময়ে নিদ্রাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন তাহলে তাঁকে কয়েকটি নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। আর এর ফলে তিনি সমস্যার হাত থেকেও মুক্তি পাবেন।
যে কোনও উদ্দীপক (caffeinated products) জাতীয় বস্তু বর্জন করতে হবে। কারণ এই জাতীয় পদার্থ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। বিশেষত দিনের শেষ দিকে এই জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়।
ঘুমের সময়ের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। যখন-তখন ঘুমানো উচিত নয়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে উষ্ণ জলে স্নান, বই পড়া বা গান শোনা অনেক সময় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
জোরে নিশ্বাস নেওয়া এবং পেশির সঞ্চালন দেহ-স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই এই ধরনের কৌশল রপ্ত করতে পারলে ভালো।
এই ক্ষেত্রে বাচ্চার বাবার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাচ্চার দেখভালের দায়িত্ব যদি মা-বাবা সমান ভাগে ভাগ করে নেয়, তাহলে মা শান্ত মনে বিশ্রাম নিতে পারে। বাচ্চার জন্য যদি রাত্রিবেলায় জেগে থাকার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে মায়ের সুবিধার জন্য বাবাকেও এগিয়ে আসতে হবে।
সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ। উল্লেখযোগ্য যে, বিশেষজ্ঞের মতামত না নিয়ে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার মতো কোনও পদক্ষেপ করা কখনোই উচিত নয়।