গর্ভাবস্থা: মায়ের সুস্থতার ক্ষেত্রে তার সঙ্গী বা স্বামীর ভূমিকা
ভারতের মতো দেশে দম্পতিরা যখন সন্তান চায় তখন হবু বাবাদের ভূমিকা সাধারণত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং এই দৃশ্য এদেশে অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ঘটনা। গর্ভাবস্থা যদিও একজন হবু মায়ের জীবনে অনেক আশা ও আনন্দের সময় তবু এই সময়ে নতুন মায়েরা তাদের সদ্যোজাত সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে যথেষ্ঠ উদ্বিগ্ন ও অধীর থাকে। এছাড়া এই পরিস্থিতিতে একজন মাকে তার নিজের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা, জৈবিক নানারকম জটিলতা ও সামাজিক- সাংস্কৃতিক চাপের মুখোমুখি হতে হয়। এই অবস্থায় একজন মহিলার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হল তার স্বামীর ভূমিকা, যে তার স্ত্রীর খুব কাছের মানুষ হয়। সেই সঙ্গে গর্ভাবস্থার সময়ে একজন স্ত্রীর জীবনে তার স্বামীর সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে। এই সময়ে একজন মহিলার জীবনে তার স্বামীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যদি কোনওরকম দ্বিধা দেখা দেয় তাহলে তার পিছনে থাকে হবু বাবাদের যথাযথ জ্ঞানের অভাব। কারণ কীভাবে একজন হবু মাকে সাহায্য করতে হবে এবং সন্তানের জন্ম নিয়ে নানারকম ভুল ধারণা এবং মহিলাদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয় সম্পর্কে একজন হবু বাবার কী করণীয়, তা নিয়ে একজন মহিলার স্বামী বা তার সঙ্গীর মনে সঠিক ধারণা গড়ে ওঠে না। যেসব মহিলাদের স্বামীরা গর্ভাবস্থার সময়ে স্ত্রীকে সবরকমভাবে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে সেসব স্ত্রীদের মধ্যে মানসিক চাপ অনেক কম হয়। সেই সঙ্গে গর্ভাবস্থাকালীন অবস্থায় এবং সন্তানের জন্মের পরেও তাদের জীবন খুব সুস্থ-সুন্দরভাবে এগিয়ে চলে। তাই হবু বাবার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা একজন মহিলার স্বামী বা তার সঙ্গীর একান্ত জরুরি। এক্ষেত্রে তাদের করণীয় হল-
মা যাতে সুস্থ বাচ্চার জন্ম দিতে পারে সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা। এই পরিকল্পনার মধ্যে থাকে চিকিৎসার জন্য অর্থের জোগান, সন্তানের জন্মের আগে ও পরে স্ত্রীকে এমনভাবে সাহায্য করা যাতে সে স্বচ্ছন্দ বোধ করতে পারে এবং সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে যাতে মা তার বাড়িতে স্বস্তিতে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
হবু মাকে একজন ধাত্রীবিদ্যা বিষয়কের কাছে নিয়ে যাওয়া, গর্ভাবস্থাকালীন পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা এবং গর্ভধারণজনিত জটিলতাগুলো বোঝার চেষ্টা করা। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর প্রয়োজনীয়তার দিকে কড়া নজর রাখা।
যেহেতু অধিকাংশ শহুরে পরিবারগুলো একক পরিবার হয় সেহেতু স্বামীদের উপরেই স্ত্রীদের অর্থাৎ নতুন মায়ের শারীরিক পুষ্টি ও দেখাভালের দায়িত্ব এসে পড়ে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনামাফিক চলা একজন স্বামীর জীবনে অবশ্যকর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।
গর্ভাবস্থার সময়ে মহিলাদের মেজাজ-মর্জির ঘনঘন বদল ঘটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। তাই এইসময়ে মহিলাদের স্বামীদের ধৈর্যশীল হওয়া ও স্ত্রীদের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থার সময়ে স্ত্রী যাতে আনন্দে থাকতে পারে সেজন্য হাসিঠাট্টা করা, তার প্রতি মনোযোগ ও খেয়াল রাখা স্বামীর অন্যতম দায়িত্ব।
স্ত্রীর সঙ্গে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ঝগড়া-বিবাদের সময়ে স্ত্রীর পাশে থেকে তাকে সাহায্য করা। মনে রাখতে হবে যে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান মিলে একটি পরিবারের গঠন সম্পূর্ণ হয়।