একটা অক্ষমতা আপনার দৈহিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না
দৈহিক ভাবমূর্তি হল মানুষের নিজের দেহ বা শরীর সংক্রান্ত একপ্রকার উপলব্ধি বা বোধ। অর্থাৎ দৈহিক গঠনের দিক থেকে নিজেকে কেমন দেখতে, দেহের বিভিন্ন অংশ, আকার, আয়তন এবং অন্যান্য উপাদান বা বস্তু সম্পর্কে উপলব্ধি বা বোধের মাধ্যমেই মানুষের নিজস্ব দৈহিক ভাবমূর্তির ধারণা গড়ে ওঠে। যেহেতু দৈহিক ভাবমূর্তি একধরনের উপলব্ধি, তাই তা আমাদের জীবনে বিভিন্ন বিষয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে, যেমন- পরিবেশ, অতি সূক্ষ্ম বা ততটা সূক্ষ্ম নয় এমন বার্তা বা ঘটনা, আমাদের স্মৃতিশক্তি এবং আমাদের নিজেদের ও পারিপার্শ্বিক জগৎকে বিচার করার জন্য আমাদের নানারকম স্বতঃসিদ্ধ ও সাধারণ ধারণা।
নেতিবাচক দৈহিক ভাবমূর্তি বলতে বোঝায় নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা বা চিন্তাভাবনা করা, গায়ের রং,আয়তন, বিশেষ বিকৃতি সংক্রান্ত বদ্ধমূল ধারণা, শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অঙ্গের দুর্বলতা প্রভৃতি। একজন অক্ষম মানুষের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি তখনই জটিল হয়ে ওঠে যখন নিজেদের অক্ষমতার গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টা সামনে আসে। আর এর ফলে দৈহিক ভাবমূর্তির সমস্যা আরও জটিল হয়ে পড়ে। দুর্ভাগ্যবশত নেতিবাচক দৈহিক ভাবমূর্তি মানুষের মধ্যে নানারকম মানসিক স্বাস্থ্যজনিত প্রতিবন্ধকতার জন্ম দেয়, যেমন- অবসাদ, খাদ্যাভ্যাসজনিত অব্যবস্থা, নিজেকে অন্যদের থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে তোলা এবং আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগা প্রভৃতি।
দৈহিক ভাবমূর্তির সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে পরিবেশের সাহায্য এবং নিজস্ব ইতিবাচক দৃঢ়তা গড়ার জন্য পারিপার্শ্বিক সহায়তার বিষয় বাদ দিলে একটা বড় অংশ নির্ভর করে মানুষের নিজের কার্যকলাপের উপর। ইতিবাচক দৈহিক ভাবমূর্তি গড়ার জন্য নিম্নলিখিত উপায়ে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে-
১. নেতিবাচক দৈহিক ভাবমূর্তিগত ধারণার সূত্রগুলো চিহ্নিত করা- মানুষ, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া প্রভৃতির প্রভাব যা একজন মানুষের মনে নেতিবাচক দৈহিক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে, সেগুলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল এগুলোর বিকল্প সূত্রগুলোর সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা করা যেগুলো দৈহিক ভাবমূর্তির বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা
দিতে সক্ষম।
২. নিজের দৈহিক গ্রহণযোগ্যতার পথে যদি কোনও অক্ষমতা স্বীকার করে নেওয়ার বিষয় থাকে তাহলে সে ব্যাপারে নিজের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। অনেকসময়ে দেখা যায় যে প্রাথমিক সমস্যার নিরসন না করেই সেই সমস্যাকে ঘিরে অন্যান্য এমন আরও সমস্যার সৃষ্টি হয় যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে। সেসব ক্ষেত্রে প্রথমে নিজের অক্ষমতাকে গ্রহণ করে নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ করা উচিত এবং অন্য বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করা জরুরি।
৩. নিজের চিন্তাভাবনার কথা একটা ডায়েরিতে লিখে রাখা দরকার। এক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক- দুই ভাবনাই লিখতে হবে। এটা একজন মানুষের নিজের দৈহিক ভাবমূর্তিগত নেতিবাচক ধারণার ক্ষেত্রে নিজেকে সচেতন করতে এবং নেতিবাচক চিন্তাভাবনার বিপদ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
৪. আপনার শহরের সহযোগী দলের কাছে সাহায্যের জন্য যেতে হবে। তারা আপনার সমস্যার সমাধানের জন্য সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে পারে। এটা এমন একটা নিরাপদ জায়গা যেখানে একজন মানুষ তার সমস্যার কথা মন খুলে বলতে পারে এবং একে অপরের কথা শুনতে পারে ও একে অপরের থেকে শিখতেও পারে।
৫. নেতিবাচক দৈহিক ভাবমূর্তি সম্পর্কে নিজের সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। কীভাবে এটা গড়ে ওঠে এবং এর প্রভাব সম্পর্কে লেখাপড়া করা, এ বিষয়ে ইন্টারনেটে আলাপ-আলোচনা দেখা বা সামনাসামনি হাজির হয়ে এই ধরনের আলোচনা শোনা প্রভৃতি একান্ত দরকারি। এগুলো আমাদের অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনার ধরনকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে।
৬. নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতে হবে এবং এমন আচরণ করতে হবে যাতে নিজের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়। এর জন্য স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের পছন্দ, ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিয়ে বিচার করতে হবে।
৭. নিজের শখের প্রতি বেশি করে নজর দিতে হবে এবং শেখার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নিজের ভালো লাগার নতুন নতুন কাজ শিখতে হবে। এটা মানুষকে তার নিজের দৈহিক গঠন নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা থেকে দূরে রাখে এবং নিজের কৃতিত্ব বা সৃষ্টিশীলতার প্রতি মানুষের মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. সর্বোপরি, যদি কেউ বোঝে যে সে তার নিজের সমস্যার সমাধানের উপায় খুঁজে পাচ্ছে না তাহলে সাহায্যের জন্য একজন মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি থেরাপির ব্যবস্থা করতে পারেন। এটা নিজেকে বোঝা এবং নিজের সঠিক চিন্তাভাবনা অনুযায়ী কাজ করতে সাহায্য করে।
প্রবন্ধটি লিখেছেন মুম্বই-এর একজন মনোবিদ শ্রেয়া শ্রীধরন-মহাত্রে।