পারিবারিক সহিংসতার বিষয়ে যে প্রশ্নগুলি সাধারণত করা হয়
ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বা পারিবারিক সহিংসতা মানে কী?
একই সংসারে বসবাস করা দুজন ব্যক্তির মধ্যে একজন যখন অপরজনের উপর শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার চালায় বা এমন করার হুমকি দেয় তখন সেই হিংসাত্মক ব্যবহারের প্যাটার্নকে পারিবারিক সহিংসতা বলা হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতা দেখানো এবং অপর ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এমন করা হয়। এই ধরনের হিংসাত্মক আচরণ বারবার করা হয়, যাকে সাইক্লিকাল প্যাটার্ন বলা হয়, এবং এর তিনটি পর্যায় রয়েছে – বিল্ড-আপ (গড়ে ওঠা), এক্সপ্লোশন (বিস্ফোরণ), এবং হানিমুন (মধুচন্দ্রিমা)। এর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শরীর এবং মনের উপর।
মহিলারা ২০০৫-এর দ্যা প্রোটেকশন অফ উইমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট মারফৎ সাহায্য চাইতে পারেন।
পারিবারিক সহিংসতার কে চিহ্নিত করবেন কীভাবে?
একে চার ভাগে ভাগ করা হয় – শারীরিক, মৌখিক এবং মানসিক, আর্থিক, এবং যৌন।
শারীরিক – এমন আচরণ যার কারণে শারীরিক আঘাত বা প্রাণ নাশের ঝুঁকি দেখা দেয়, যেমন চড় মারা, মারধোর করা, গলা টিপে ধরা, অস্ত্র ব্যবহার করা বা এই ধরনের অন্যান্য আচরণ।
মৌখিক এবং মানসিক – মহিলার আত্ম-মর্যাদা বোধ কে আঘাত করা বা শেষ করে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে করা আচরণ। যেমন অপমানজনক কথা বলা বা গালাগাল দেওয়া, সহিংসতার ভয় দেখানো প্রভৃতি।
আর্থিক – টাকাপয়সা না দেওয়া বা অন্যান্য আর্থিক সম্পদ কেঁড়ে নেওয়া।
যৌন – যৌন নিগ্রহের উদ্দেশ্য নিয়ে করা আচরণ যাতে মহিলাকে অসম্মান, অপমান, লাঞ্ছিত বা আঘাত করা যায়।
পারিবারিক সহিংসতার মানসিক প্রভাব কী কী?
পারিবারিক সহিংসতার ব্যক্তির জন্য দৈনিক মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং তার নিয়মিত কাজকর্মকে প্রভাবিত করে। সাধারণত দেখা গিয়েছে যে এর ফলে আত্ম-মর্যাদা বোধ এবং নিজের প্রতি আস্থা কম হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঘটনায় প্রভাবিত মহিলার ব্যক্তিসত্তা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। অন্যান্য লক্ষণ যা দেখা দিতে পারে তা হল ঘুমোতে না পারা, একাকীত্ব, অসহায় বোধ করা, সব সময় তক্কেতক্কে থাকা, মনোযোগ না করতে পারা এবং সিদ্ধান্ত না নিতে পারা।
পারিবারিক সহিংসতার ফলে কী ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত হতে পারে?
পারিবারিক সহিংসতার কারণে গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদী মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানসিক রোগ যেমন অবসাদ এবং উদ্বেগ। যে মহিলাদের সাথে পারিবারিক সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটে, তাদের অবসাদ ধরা পড়ার সম্ভাবনা দিগুণ এমন মহিলাদের তুলনায় যারা তা ভোগ করেননি। পারিবারিক সহিংসতার ফলে অন্যান্য যে সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে তা হল – মাদক দ্রব্যের নেশা, ওসিডি এবং খাওয়াদাওয়ার বিকার।
একজন গর্ভবতী মহিলার উপর পারিবারিক সহিংসতার কী প্রভাব পড়তে পারে?
গর্ভবতী থাকাকালীন পারিবারিক সহিংসতার ফলে মায়ের এবং নবজাতক শিশুর নানা ধরনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে জন্মের সময় শিশুর ওজন কম থাকা, গর্ভপাত হয়ে যাওয়া, এবং সময়ের আগেই প্রসব বেদনা শুরু হয়ে যাওয়া। মানসিক সহিংসতার ফলে জীবনের গুণগত মান কমে যায়, যা মহিলার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যর পাশাপাশি সামাজিক কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।