মানসিক অবসাদ-বিরোধী ওষুধের (অ্যান্টি-ডিপ্রেশান্টস্‌) বিষয়ে কিছু প্রশ্ন-উত্তর

মানসিক অবসাদ-বিরোধী ওষুধের (অ্যান্টি-ডিপ্রেশান্টস্‌) বিষয়ে কিছু প্রশ্ন-উত্তর

Published on
Q

অ্যান্টি-ডিপ্রেশান্টস্‌ বা অবসাদ-বিরোধী ওষুধ বলতে কী বোঝায়?

A

প্রাথমিকভাবে, মানসিক অবসাদের উপসর্গ থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা অবসাদ-বিরোধী নানারকম ওষুধ প্রয়োগ করেন। এই জাতীয় অবসাদ-বিরোধী ওষুধ মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ধরনের মানসিক উদ্বেগজনিত  সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করে থাকেন। তবে এই বিষয়টি নির্ভর করে অসুখের গভীরতা ও গুরুত্বের উপর। আবার ওসিডি-র মতো মানসিক অসুস্থতা দূর করার জন্যও অনেকসময়ে এসব ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।

রুগিকে ওষুধ দেওয়ার আগে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রোগের গুরুত্ব বিচার করেন এবং তারপরেই সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি ওষুধ দেবেন কি দেবেন না। অবসাদ-বিরোধী ওষুধ দেওয়ার সময়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা একজন রুগির ক্ষেত্রে যে যে লক্ষণগুলি দেখার চেষ্টা করেন সেগুলি হল-

  • মানসিক অবসাদের জন্য তার দৈনন্দিন জীবনযাপন এবং কাজকর্মের ক্ষেত্রে ক্ষতি হচ্ছে কিনা
  • দীর্ঘ সময় ধরে রুগি অবসাদে ভুগছে কিনা

Q

অবসাদ কাটানোর ওষুধ খেয়ে একজন রুগি কতটা সুস্থ থাকবে বলে আশা করতে পারে?

A

এই ধরনের ওষুধগুলি ঠিকভাবে কার্যকর হতে একটু সময় লাগে। সাধারণত ১ থেকে ৩ সপ্তাহ খাওয়ার পর একজন রুগি কিছুটা সুস্থ বোধ করেন। কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের আগে এই জাতীয় ওষুধগুলির সম্পূর্ণ উপকারিতা বোঝা সম্ভব নয়। চিকিৎসা থেকে ভালো ফল পেতে ওষুধের সঙ্গে দরকার হয় সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং-এর।

Q

অবসাদ-বিরোধী ওষুধ খেলে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি?

A

এই ওষুধের কতগুলি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল ঝিমনো বা ক্লান্ত বোধ করা, মাথাব্যথা, মুখগহ্বর শুকিয়ে যাওয়া, বমি ভাব, পেটের গন্ডগোল এবং ওজন বৃদ্ধি। অধিকাংশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দু'সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে। কিন্তু এই বিষয়ে একজন সাধারণ চিকিৎসক বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

Q

অবসাদ কাটানোর ওষুধের উপর রুগির কি আসক্তি জন্মাতে পারে?

A

যে কোনও প্রকার নেশার বস্তু যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া হয় তাহলে তা মানুষের জীবনে কুপ্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু অবসাদ দূর করার ওষুধগুলো মোটেই এই জাতীয় নেশার দ্রব্য নয়। হঠাৎ করে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিলে প্রথম ক'দিন অস্বস্তি হয় ঠিকই। তবে এই ধরনের অনুভূতি আস্তে আস্তে চলেও যায়। কিন্তু যদি দেখা যায় যে মানসিক অবসাদের লক্ষণগুলি আবার দেখা দিচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে  যে অসুখ পুরোপুরি সারেনি। এই ঘটনা শুধুমাত্র ওষুধের উপর আসক্তি জন্মানোর জন্যই হয় না।  

Q

অবসাদ-বিরোধী ওষুধ খেলে কি একজন রুগি মদ্যপান করতে পারে?

A

এই জাতীয় ওষুধ খেলে মদ্যপান করা যায় না। কারণ অ্যালকোহল বা মদ খেলে মানুষ এমনিতেই অবসাদের শিকার হয়ে পড়ে এবং এটা মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি নেশাগ্রস্ত করে তোলে। এছাড়া অ্যালকোহল অবসাদ-বিরোধী ওষুধের উপকারিতা নষ্ট করে দেয় এবং অবসাদের লক্ষণগুলি আবার দেখা যায়। তাই যখন অবসাদ দূর করার ওষুধজনিত চিকিৎসা চলে তখন মদ্যপান করা একেবারেই উচিত নয়।

Q

অবসাদ-বিরোধী ওষুধের বিকল্প হিসেবে কি শরীরচর্চা করা যায়?

A

সুস্থ-সবল থাকার অন্যতম চাবিকাঠি হল নিয়মিত শরীরচর্চা করা। নিয়মিত শরীরচর্চা মানুষের মেজাজ-মর্জি ভালো রাখতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা সহ অন্যান্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যে সব ব্যক্তি নিয়মিত শরীরচর্চা করে তারা দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে খুবই উপকার পায়।

অল্প পরিমাণ অবসাদ এবং উদ্বেগের ক্ষেত্রে শরীরচর্চা খুবই ফলপ্রসু। কিন্তু যদি দেখা যায় যে লক্ষণগুলি মাঝারি থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে তাহলে ওষুধ খাওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। আর যে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা করছেন তিনি নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুপারিশ করেন।

Q

কখন এই ওষুধ খাওয়া একজন রুগি বন্ধ করতে পারে?

A

যখন ওষুধ চলে তখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে কিছুদিন অন্তর দেখাতে যেতে হয় এবং তিনি বোঝার চেষ্টা করেন যে ওষুধ ঠিকঠাক ফল দিচ্ছে কিনা। যদি কেউ অনেকদিন ধরে নির্দিষ্ট মাত্রার ওষুধ খায় আর যদি দেখা যায় যে তাতে ভালো ফল হচ্ছে তাহলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কিছু সময় ওষুধ বন্ধ রাখার সুপারিশ করতে পারেন। এই অবস্থায় যদি কারোর মধ্যে আবার অবসাদের লক্ষণগুলি দেখা যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তারপর তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে ওষুধ খাওয়া এবং বন্ধের ব্যবস্থা করা উচিত। যখন-তখন ওষুধ বন্ধ করার সুপারিশ কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞই করেন না। 

Q

যখন অবসাদ-বিরোধী ওষুধ চলবে তখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে একজন রুগির কী কী প্রশ্ন থাকতে পারে?

A

এই জাতীয় ওষুধ খাওয়ার ফলাফল সাধারণত আপেক্ষিক হয়ে থাকে। অর্থাৎ সব রুগির কাছেই যে এই ওষুধের ফলাফল একইরকম হবে তা নয়। এই ওষুধের প্রতিক্রিয়া প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা হয়। অবসাদের সমস্যা দূর করার চিকিৎসা চলার সময়ে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলি করা যায়-

  • কিছু কিছু অবসাদ-বিরোধী ওষুধ রয়েছে যাদের নির্দিষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ যখন এই জাতীয় ওষুধ রুগিকে খেতে দেবেন তখন সেই ওষুধের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে কিনা সেই বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা যায়।
  • এই জাতীয় ওষুধের একটা সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল বমি পাওয়া অথবা পেটের গোলমাল হওয়া। তাই ওষুধ খাওয়ার আগে একজন রুগির অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত যে ওষুধ তিনি খালি পেটে খাবেন নাকি খাবারের সঙ্গে বা খাবার খাওয়ার পরে খাবেন।
  • যদি কোনও রুগি অন্যান্য বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন- ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কোলেস্টেরল-এর জন্য ওষুধ খান তাহলে তাদের জেনে  নেওয়া উচিত যে ওই ওষুধগুলোর সঙ্গে অবসাদ-বিরোধী ওষুধ খেলে কোনও বিপরীতধর্মী ফল হবে কিনা।
  • সন্তানসম্ভবা মহিলাদের ক্ষেত্রে অবসাদ-বিরোধী ওষুধ তার বাচ্চার উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে সেই বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করা জরুরি।

কোনও মা যদি তার সন্তানকে বুকের দুখ খাওয়ান তাহলে মানসিক অবসাদ-বিরোধী ওষুধ বাচ্চার উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা একজন ডাক্তার অথবা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে জানা প্রয়োজন।

Q

একজন মানুষকে মানসিক অবসাদ কাটানোর ওষুধ কে দিতে পারেন?

A

এই ওষুধ দেওয়ার ক্ষমতা থাকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের। চিকিৎসা বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত একজন সাধারণ ডাক্তার এবং একজন স্নায়ুরোগ (নিউরোলজিস্ট) বিশেষজ্ঞও এই ধরনের ওষুধ একজন রুগির জন্য সুপারিশ  করতে পারেন। একজন মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ যেমন- সাইকোলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট এবং সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা কাউন্সেলিং ও থেরাপি করতে পারলেও একজন মানসিক অবসাদগ্রস্ত রুগির চিকিৎসায় কোনওরকম ওষুধ দিতে পারেন না।

এই প্রবন্ধটি লেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন সাক্রা ওয়ার্ল্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাবিনা রাও।      

logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org