নিজের প্রিয়জনের জন্য সঠিক পুনর্বাসন কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া
একজন পরিচর্যাকারী হিসাবে, আপনাকে হয়তো কোনও এক সময় আপনার প্রিয়জনের চিকিৎসার জন্য একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র খুঁজে বার করতে হবে, যাতে সেখানকার সাহায্য নিয়ে তাঁরা পুরোপুরি স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন। ভাল পুনর্বাসন কেন্দ্র খোঁজার সময় দুটি জিনিস খেয়াল রাখতে পারেন: আপনার প্রিয়জনের চাহিদা অনুযায়ী সেখানে কি কি সুবিধা আছে, আর সেখানকার সঠিক আস্থাপত্র, বা সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা রয়েছে কিনা।
পুনর্বাসন সুবিধার বিভিন্ন ধরণ
পুনর্বাসন সুবিধা অনেক ধরণেরই রয়েছে। কোন কোন সুবিধা ব্যবহৃত হবে তা নির্ভর করছে অসুস্থতার ধরণের উপর, কি কি সুবিধা উপলব্ধ রয়েছে তার উপর, আর রোগীর প্রয়োজনের উপর।
স্বজন গোষ্ঠী পরিচালিত পুনর্বাসন হল মানসিক রোগীর জন্য আদর্শ পুনর্বাসন। একজন মানসিক অসুস্থ ব্যক্তি যে কমিউনিটির অন্তর্গত, তাঁর সেখানেই পুনর্বাসন হয়। চিকিৎসার পর সেই ব্যক্তি নিজের কমিউনিটিতে ফিরে যেতে পারেন এবং তাঁর চেনাশোনা পরিবেশেই অনেক কিছু শিখতে পারেন। সেখানে একজন মনোবিদের ভুমিকা খুবই সামান্য; সেই গোষ্ঠীর সদস্যরা (বন্ধুবান্ধব, পরিবারের লোকজন) একজন ব্যক্তি কে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নেন এবং তাঁদের জন্য নানান সুযোগ তৈরি করে দেন। এর সাহায্যে মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগানো যায় এবং সমাজে প্রচলিত কুণ্ঠাও মেটানো যায়। এই কমিউনিটি তাঁদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধাও তৈরি করে দেয় যাতে ব্যক্তি নিজেদের ক্ষমতাগুলো বুঝে উঠতে পারেন। এর ফলে সেই সব মানুষজনের সমাজের সাথে খোলামেলা ভাবে মেলামেশা করারও সুযোগ তৈরি হয়। আমাদের দেশে খুব কম সংখ্যক স্বজন গোষ্ঠী পরিচালিত পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে।
ডে কেয়ার সুবিধা হল এমন একটি জায়গা যেখানে একজন ব্যক্তি কিছু মাস বা সপ্তাহের জন্য প্রত্যেক দিন আট ঘণ্টা সময় কাটান। রোগী যে বিষয়গুলি নিয়ে আগ্রহী, সেই বিষয়গুলির উপরেই তাঁদের বিভিন্ন প্রশিক্ষন দেওয়া হয়, যাতে পরবর্তী কালে তাঁদের চাকরি পেতে সুবিধা হয়। এগুলি এমন একটি পরিবেশে করা হয়, যেখানে সকলে তাঁদের সমস্যার কথা জানেন এবং বোঝেন। এর ফলে তাঁরা সমাজের অন্য লোকজনের সাথে মেলামেশা করতে পারেন যার ফলে তাঁদের উপর অত্যন্ত ভাল প্রভাব পড়ে। একবার প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর, ব্যক্তি নিজের পছন্দমতো চাকরি করতে পারেন এবং তাঁর মধ্যে আত্মবিশ্বাসও জেগে ওঠে।
ডে কেয়ার একজন মানুষকে নিজের দৈনন্দিন জীবন গোছাতে এবং তাঁকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে সাহায্য করে। কিছু ক্ষেত্রে যখন একজন ব্যাক্তিকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে কোনও লাভ হয় না, তখন তাঁকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরানোর জন্য হাসপাতালেও ভর্তি করতে হতে পারে। একজন মানুষের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁর পুনর্বাসন করা সম্ভব নয়। তাঁর প্রথমে কিছু পরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে, তারপর তিনি বুঝতে পারেন পুনর্বাসিত হওয়া কতটা প্রয়োজনীয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতা এতটাই গ্রাস করে ফেলে, যে ডে কেয়ারের সাহায্য নিয়েও কোনও কাজ হয় না। সে ক্ষেত্রে পুনর্বাসনের কাজ হবে তাঁদের সারিয়ে তোলার চেয়ে তাঁদের যত্ন নেওয়া এবং তাঁদের কিছু দিনের জন্য আশ্রয় দেওয়া।
কেন্দ্রের আস্থাপত্র যাচাই করে নেওয়া
পুনর্বাসনের মূল উদ্দেশ্য হল রোগীকে আবার স্বাবলম্বী করে তোলা। কিন্তু, কিছু কিছু পুনর্বাসন কেন্দ্রে শুধুই রোগীর যত্ন নেওয়া হয়, তাঁদেরকে স্বাবলম্বী করার প্রচেষ্টা করা হয় না। আবার কিছু কিছু বেআইনি পুনর্বাসন কেন্দ্রও রয়েছে, যেখানকার কর্মীরা অযোগ্য এবং সেখানে এমন চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় যা রোগীদের সেরে উঠতে সাহায্য করে না। কিছু পুনর্বাসন কেন্দ্রে মানবাধিকার শর্ত লঙ্ঘন করে রোগীদের বন্দি করে রাখা হয়। অনেক সময় পরিবারের লোকজনেরও মনে হয় যে তাঁরা যে পদ্ধতি ব্যবহার করছেন, তা শ্রেষ্ঠ। কিছু মানসিক অসুস্থতার জন্য রোগীকে কিছু মাসের জন্য পুনর্বাসন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগে। আলাদা আলাদা ব্যবস্থার জন্য আলাদা আলাদা খরচ লাগে। সরকারি হাসপাতালের পুনর্বাসন কেন্দ্রে অল্প খরচে চিকিৎসা হয়, যেখানে বেসরকারি কেন্দ্রে মাস অনুযায়ী খরচ অনেকটাই বেশি। পরিচর্যাকারী হিসাবে আপনি আপনার সুবিধা ও সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনও বিকল্প বেছে নিতে পারেন।
কি ভাবে বুঝবেন একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র আইনসম্মত ও স্বচ্ছ কি না?
এমন একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র বেছে নেওয়া সঠিক হবে, যার সম্পর্কে আপনাকে আপনার চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছে।
পুনর্বাসন কেন্দ্রটির, বা হাসপাতালের নিশ্চয় আইনি স্বীকৃতি থাকবে। সেই স্বীকৃতিটি ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিশন বোর্ড ফর হসপিটালস্ অ্যান্ড হেলথ্কেয়ার প্রোভাইডার্স (নাভ) বা রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র তরফ থেকে দেওয়া হয়।
একটি আইনসম্মত প্রতিষ্ঠানে সরকারি অতিথিদের একটি বোর্ড বানানো হয়, যারা প্রত্যেক দু-তিন মাসে একবার করে ঐ প্রতিষ্ঠানে সব কিছু নিয়ম অনুযায়ী চলছে কিনা তা দেখতে যান। যদি তাঁরা দেখেন কোনও রকম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানটি তাঁরা বন্ধ করে দিতে পারেন।
সেই প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই একটি পরামর্শ বাক্স থাকতে হবে। প্রত্যেকে সেই বাক্সে নিজের বক্তব্য লিখে ফেলতে পারেন, যা শুধু মাত্র বোর্ডের লোকজনই পড়তে পারবেন।
যদি একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র রোগীদের বাড়ির লোকজন বা অতিথিদের সেখানে যেতে না দেয় তাহলে বুঝতে হবে যে সেই কেন্দ্রের কাজের পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা নেই। সেখানকার কর্মীরা কোনও কিছু গোপন করছেন।
একটি আদর্শ পুনর্বাসন কেন্দ্র রোগীদের বাড়ির লোকজনকে সেখানে আসতে উৎসাহ দেয়। যারা পুনর্বাসন কেন্দ্র ব্যবহার করেন তাঁদের সঙ্গে কথা বললে জানতে পারবেন কোনটি আপনার জন্য ভাল আর কোনটি নয়।