আপনি কি আপনার অ্যাপ্রেইজাল নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন? এখন আপনি তার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন
অ্যাপ্রেইজাল বা কর্মক্ষেত্রে মূল্যায়নের সময় আমাদের অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ জন্মায়- কীভাবে বিগত একবছরে আমাদের কর্মক্ষমতার মূল্যায়ন হবে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত থাকি এবং নিজেদের কর্মক্ষমতাকে ঘিরে নানারকম আলোচনা ও বেতন বৃদ্ধি নিয়ে অধীর হয়ে যাই। যদি অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয় তাহলে চাকরি বা কাজের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের মনে ভয়ও জন্মায়। এইধরনের চিন্তাগুলো কি স্বাভাবিক? কীভাবে আপনি এবিষয়ে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হবেন?
কীভাবে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মূল্যায়নজনিত আলোচনা ও সেই সংক্রান্ত মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব তা নিয়ে শ্রীরঞ্জিতা জেউরকার কথা বলেছিলেন ওয়ার্কপ্লেস অপশানস্-এর গ্লোবাল ক্লিনিক্যাল ম্যানেজার মল্লিকা শর্মার সঙ্গে।
মূল্যায়নের সময়ে মানসিক উদ্বেগ বা চাপ অনুভব করা কি স্বাভাবিক বিষয়? এইধরনের উদ্বেগ সম্পর্কিত বিষয়গুলো কী হতে পারে?
মূল্যায়ন পর্বকে যতটা না বিগত একবছরে নিজেদের কাজকর্মের ভালো-মন্দের খতিয়ান বা বিচার বলে মনে করা হয় তার থেকে অনেক বেশি এই বিষয়টাকে নিজেদের কর্মক্ষমতা বা কর্মদক্ষতার ভবিষ্যদ্বক্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ নিজেদের মনের সন্দেহের জন্য আমরা আগে থেকেই স্থির করে নিই বা ভবিষ্যদ্বাণী করি যে আমাদের কর্মজীবনের আগামী দিনগুলো হয়তো নিম্নগামী বা নীচের দিকে নামতে চলেছে। আসলে মূল্যায়নের প্রক্রিয়াকে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের বাহ্যিক গুরুত্ব নির্ণয় বা মূল্যায়ন হিসেবে দেখি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মূল্যায়ন আমাদের অতীতের কর্মক্ষমতার বাহ্যিক গুণাগুণ নিরূপণ করে বা কর্মদক্ষতার ভালো-মন্দ নির্ণয় করে। আমরা যেহেতু মনে মনে নিজের অনিবার্য পরিণতি বা নিয়তি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করি সেহেতু আমরা ভাবি যে বাইরের জগৎটাও আমাদের শেষ বা চূড়ান্ত পরিণতি নিয়ে সেই একইভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করছে। আমরা নিজেরা কী বিশ্বাস করছি তার প্রতিফলন সাধারণভাবে আমাদের পারিপার্শ্বিকের উপর পড়ে। আমরা আমাদের গুণাগুণ নির্ধারণের ফলাফলকে নিজেদের যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবেও বিবেচনা করি। আমরা বিশ্বাস করি যে মূল্যায়ন যদি আমাদের ভালো বলে তাহলে আমরা ভালো অথবা তা যদি আমাদের অযোগ্য বলে তাহলে আমরা অযোগ্য।
সত্যটা হল এই যে আমাদের কাজের বা চাকরির মূল্যায়ন বা পরিমাপের ফলাফল আমাদের যোগ্যতার উপর শুধু আংশিকভাবে নির্ভর করে। তা আমাদের কর্মস্থলের ম্যানেজারদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। অর্থাৎ ম্যানেজারদের বলতে বোঝাচ্ছে তাদের যোগ্যতাকে, প্রতিষ্ঠানগত রাজনীতি, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য, প্রতিযোগিতা এবং বাজারের শক্তি বা চাহিদা-সহ অন্যান্য বিষয়ও এর মধ্যে থাকতে পারে। এগুলো আমাদের যোগ্যতা পরিমাপের ক্ষেত্রে চরম বা শেষ কথা এবং অকাট্য বা তর্কাতীত হয় না।
আমাদের প্রয়োজন নিজেদের প্রশ্ন করা:
আমরা জ্যোতিষী নই, অর্থাৎ নিজেদের ভাগ্য গণনা আমরা নিজেরা করতে পারি না। তাই ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে তা নিয়ে আমরা ভবিষ্যদ্বাণীও করতে পারি না। তাহলে কেন আমরা আমাদের অনিবার্য পরিণতি বা নিয়তি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করব?
কেন আমরা মনে করি যে যদি একবার মূল্যায়ন আমাদের পক্ষে ভালো বা শুভ না হয় তাহলে সেই ফলাফলই আমাদের সমগ্র ভবিষ্যৎ জুড়ে একইরকমভাবে বজায় থাকবে এবং আমরা কখনোই আমাদের ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব না। কিছুটা হলেও কি সেখানে থেকে আমরা আমাদের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব না?
কেন আমরা আমাদের কাজের মূল্যায়নকে আমাদের সমগ্র ব্যক্তিগত যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে সম্মান দেখাই?
আমাদের কর্মস্থল বা অফিসের ম্যানেজার বা সুপারভাইজারের সঙ্গে যখন আমাদের কর্মদক্ষতা বা কার্যক্ষমতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয় তখনও আমাদের মধ্যে মানসিক উদ্বেগ জন্মায়। কীভাবে এই বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?
প্রথমত, সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা করতে হবে। এইধরনের মূল্যায়ন আপনার জীবদ্দশায় বহুবারই হতে পারে, তার মধ্যে এটা হয়তো একবার। এই একবারের মূল্যায়নই আপনার বা আপনাদের সমগ্র জীবনের ভালো-মন্দ বিচার করতে পারে না। মনে রাখতে হবে যে আমাদের জীবনটা অনেকটা ম্যারাথন দৌড় বা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার মতো (যেখানে আমাদের সফলভাবে লক্ষ্য পূরণ করতে হয়)। অন্যদিকে, আমাদের জীবনটা কখনোই পর্যায়ক্রমে ১০০ মিটার ছোট ছোট দৌড়ের মতো নয়, যেখানে একটার পর আরেকটা পর্যায় আসে (জেতার লক্ষ্য নিয়ে)।
দ্বিতীয়ত, আপনার সামর্থ বা শক্তির কথা মনে রাখা জরুরি। আর এগুলো বিবেচনা করে দেখুন যে আপনি আজ যেখানে রয়েছেন সেখানে পৌঁছতে সেগুলো আপনাকে কীভাবে সাহায্য করেছে ও ভবিষ্যতে আপনি যেখানে পৌঁছতে চাইছেন সেখানে পৌঁছনোর জন্য সেগুলো আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারে।
এবং তৃতীয়ত হল, নিজেকে প্রশ্ন করুন- যদি আপনার জীবনে কখনও দুঃসময় আসে তাহলে কী হবে? যদি আপনি এর উত্তর খুব সৎভাবে খোঁজেন তাহলে আপনি উপলব্ধি করবেন যে যদি সত্যিই আপনার জীবনে কখনও খারাপ সময় আসে তাহলে আপনার জীবন টিকে থাকার মানসিকতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।
মানুষ তার মূল্যায়নের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে, যার ফলে তাদের মধ্যে অনেক কম উদ্বেগ দেখা দেবে?
বাস্তবসম্মত উপায়ে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে এগিয়ে যেতে হবে এবং দেখতে হবে আপনি কী অর্জন করছেন আর কী করতে পারছেন না। কয়েকটি লক্ষ্যে আপনার পৌঁছনোর সাফল্য বা কৃতিত্ব অর্জনের পিছনে কী কারণ রয়েছে তা নিয়ে সচেতন হতে হবে এবং অন্য কয়েকটি লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারার ব্যর্থতার ক্ষেত্রেও কী কারণ রয়েছে সে সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।
নিজেদের সামনের প্রতিবন্ধকতাগুলো সম্পর্কে বুঝতে হবে এবং ভবিষ্যতে কিভাবে সেগুলোর মোকাবিলা করা যাবে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হবে
নিজের লক্ষ্যকে সীমিত করার বদলে প্রসারিত করতে হবে
নিজের শক্তি দিয়ে মূল্যায়নের আলোচনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সেই আলোচনায় পরোক্ষ মনোভাব দেখানো এবং তা অনুসরণ করার বদলে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে।
নিজেকে এবং নিজের যোগ্যতার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। নিজের শক্তি ও দুর্বলতাগুলো বুঝতে হবে।
যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে আপনার চিন্তাভাবনার বিষয়গুলো যা আপনি মিটিং-এর সময়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক, সেগুলো একটা ছোট কাগজে লিখে রাখতে হবে। যাতে আপনার কী বলা প্রয়োজন বা জানতে চাওয়া দরকার তা আপনি ভুলে না যান।
মূল্যায়নজনিত উদ্বেগ দূর করার জন্য সাহায্য চাওয়ার সঠিক সময় ঠিক কখন হতে পারে?
এর জন্য আপনি যেকোনও সময় সাহায্য চাইতেন পারেন। এমনকী এটি শুধু আপনার মাথা থেকে চিন্তা দূর করার জন্যও হতে পারে। যদি আপনার মধ্যে উদ্বেগ জাগে, আপনি ঘুমাতে না পারেন, আপনার পেট গুড়গুড় করতে থাকে প্রভৃতি মানসিক চাপের যেকোনও বাহ্যিক লক্ষণ দেখা দেয় বা এমন কোনও অনুভূতি যা আপনি প্রকাশ করতে পারছেন না- সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি অন্যের সাহায্য নিতে পারেন। অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া নিজের দুর্বলতা প্রকাশের লক্ষণ নয়। অন্যদিকে, সাহায্য চাওয়ার জন্য প্রয়োজন সাহসের এবং এটা নিজের শক্তিশালী হওয়া ও নিজের সীমাবদ্ধতাকে বোঝারই লক্ষণ।