মায়েদের কর্মজীবন হয়ে উঠুক সুনিশ্চিত, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ এবং যথোপযুক্ত
যে কোনও কর্মরত মহিলার জীবনে একজন মায়ের যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্যপালন করাটা সব সময়েই বেশ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। হবু মায়েদের, যাঁরা পূর্ণ সময়ের জন্য কোনও একটি সংস্থায় কর্মরত, তাঁদের উপযুক্ত সাহায্য করা সেই সংস্থার কর্তৃপক্ষের অন্যতম গুরুদায়িত্ব। এই ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দানের মাধ্যমে মহিলা কর্মচারীদের সহায়তার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। প্রতিটি সংস্থার ক্ষেত্রে এইসব বিষয় দেখভালের ভার থাকে হিউম্যান রির্সোস বিভাগের উপর। দ্য ম্যাটারনিটি বেনিফিটস অ্যাক্ট, ১৯৬১ সালের আইন মোতাবেক এহেন নিয়মকানুন গড়ে উঠেছে।
এই আইন অনুসারে হবু মায়েরা পূর্ণ বেতন-সহ সন্তান জন্মানোর আগে ও পরের ৬ সপ্তাহ অর্থাৎ মোট ১২ সপ্তাহের জন্য মাতৃত্বকালীন অবসর যাপন করতে পারবেন। এই আইনে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া রয়েছে যে, একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তার গর্ভবতী মহিলা কর্মীর প্রতি কোনওরকম বৈষম্যমূলক আচরণ প্রদর্শন করতে পারবে না। শুধু তা-ই নয়, গর্ভধারণের অজুহাত দেখিয়ে কোনও প্রতিষ্ঠান কাউকে বরখাস্তও করতে পারবে না। মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য একজন গর্ভবতী মহিলাকে লিখিতভাবে আবেদন জানাতে হবে।
এছাড়াও, প্রসূতি মহিলাদের গর্ভধারণ সংক্রান্ত যে কোনও শারীরিক সমস্যার জন্য অতিরিক্ত ছুটি বরাদ্দ। এই ক্ষেত্রে অবশ্য উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল করতে হবে। অন্যদিকে গর্ভপাতজনিত কারণেও একজন মহিলা কর্মচারী দুর্ঘটনার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী ৬ সপ্তাহ ছুটিতে থাকতে পারবেন।
হিউম্যান রির্সোস বা মানবসম্পদ সংক্রান্ত নীতি
চাকরিরত হবু মায়েদের সুবিধাদানের ক্ষেত্রে রীতিমতো বাধ্যতামূলক ভাবেই কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রির্সোস বিভাগ কাজ করে থাকে। এইসব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন বা রীতি-নীতি উদার হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। গর্ভাবস্থায় কোনওরকম মানসিক চাপ যে মা এবং শিশু উভয়ের ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক হতে পারে, সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রির্সোস বিভাগের অবদান যথেষ্ট। এই বিষয়ে সংস্থার অভিজ্ঞ মহিলা কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মা এবং সন্তানের মঙ্গলের জন্য হবু মায়েদের অফিস-কাছারির নিয়ম-নীতিতে প্রয়োজন মতো পরিবর্তন বা বদল আনা একান্ত জরুরি। এছাড়া দরকার মতো মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ বাড়ানো, কোম্পানির পক্ষ থেকে মাতৃত্বকালীন অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দান, গর্ভাবস্থাকালীন যাতায়াতের সুবন্দোবস্ত করা, কাজের সময়গত রদবদল এবং গর্ভবতী মহিলা কর্মচারীর প্রতি যত্নশীল হওয়া যে কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্তব্য।
সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মে সাম্প্রতিক প্রবণতা
ইদানীং বিভিন্ন অফিসে সেই সব মহিলা কর্মচারী, যাঁরা মা হওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গুগ্ল, ফ্লিপকার্ট, ইনমবি-র মতো কোম্পানিগুলিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৫ মাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত করা হয়েছে। এই সব জায়গায় মায়েদের কাজের ধারাতেও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। অনেক সময়ে মায়েরা বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করতে পারেন বা ঘড়ি ধরে কাজ করার বদলে নিজের সময় মতো কাজ করার স্বাধীনতাও তাঁরা অর্জন করেছেন। মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ পর্যন্ত মহিলারা অফিসের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা ও যাতায়াত বাবদ খরচ-খরচা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।
এখন অনেক অফিসেই বাচ্চার দেখভালের জন্য সুবন্দোবস্ত রয়েছে। এর ফলে মায়েরা অফিসে বাচ্চাদের সঙ্গে করে নিয়ে এসে নিশ্চিন্ত হয়ে কাজ করতে পারেন। এই কাজ সুষ্ঠভাবে করার জন্য বহু কোম্পানি ডে-কেয়ার সেন্টারগুলির সাহায্য নেয়। এমনকী কোম্পানির অফিসে নার্সিং রুমেরও ব্যবস্থা থাকে।
এহেন আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হল যে, মহিলা কর্মচারীরা যাতে সন্তান জন্মানোর পরে পুনরায় তাঁদের কর্মজগতে ফিরে যেতে পারেন এবং একই সঙ্গে শিশুর লালন-পালনের দিকেও মনোনিবেশ করতে সক্ষম হন। এই পদ্ধতি মায়েদের উদ্বেগ কমিয়ে বাচ্চা হওয়ার আগে ও পরে তাঁদের মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ এবং চাঙ্গা রাখতে সহায়তা করে।
পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা
এই ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের অধীনস্থ কর্মচারীরা ১৫ দিনের পিতৃত্বকালীন ছুটি পেয়ে থাকেন। তবে বেসরকারি ক্ষেত্রে এইরকম কোনও আইন এখনও নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক জায়গায় ইদানীং সন্তান জন্মানোর আগে ও পরে একজন বাবার ভূমিকাকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সময় দৈনন্দিন গৃহস্থালির কাজে একজন বাবার দায়িত্বপালনের জন্য ফেসবুকের মতো সংস্থা বেতন সহ পিতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ৪ মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।