মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে কোন বিষয়গুলির উপরে আপনার নজর রাখা উচিৎ

মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে কোন বিষয়গুলির উপরে আপনার নজর রাখা উচিৎ

ভারতে মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষজনের জন্য তাদের কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবন্দোবস্ত রয়েছে। এবং আমাদের মধ্যে খুব কমজনেরই এমন কাজের রুটিন রয়েছে, যা তাদের সঙ্গে মানানসই নয়। কিন্তু এই ব্যবস্থার মধ্যে যদি কোনওরকম ব্যতিক্রম ঘটে তাহলে চাকরির আবেদন ও ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে একজনের উচিত নীচের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা:

  • কী ধরনের কাজ করতে আপনি ইচ্ছুক তা চিহ্নিত করা জরুরি- আপনি কি ছোট সংস্থা বা দলে কাজ করতে চাইছেন? অথবা আপনি কি খুব নামী বড় সংস্থায় কাজ করতে ইচ্ছুক? আপনি কি সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে  চাইছেন? কিংবা এমন কোনও কাজে যোগ দিতে চাইছেন যার একটা ভবিষ্যৎ রয়েছে এং তা গতানুগতিক? প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত কাজ বেছে নেওয়ার জন্য বিশ্বাসভাজন বন্ধু বা পথপ্রদর্শকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা জরুরি।

  • যে কাজটা আপনি করতে যাচ্ছেন তাতে কি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া রয়েছে নাকি সময়ের ক্ষেত্রে শিথিলতা রয়েছে? প্রয়োজন হলে কি কিছু সময়ের জন্য ছুটি পাওয়া সম্ভব? এরকম কাজের উদাহরণ হল লেখালিখির কাজ, যা বাড়িতে বসে করা যায় বা সেখানে সময়ের কড়া নিয়ন্ত্রণ নেই। অথবা কিছু সময়ের জন্য নিজের ইচ্ছে ও পছন্দমতো কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়।

  • এমন কাজ করা উচিত যার চাপের সঙ্গে আপনি মানিয়ে নিতে পারেন। যদি কাজের প্রয়োজনে ২৪ ঘন্টা, সাতদিন আপনাকে সময় দিতে হয় এবং তার সঙ্গে আপনি মানিয়ে নিতে না পারেন, তাহলে সেই সমস্যা সমাধানের জন্য  ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য গড়ে তোলা জরুরি।

  • কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে কোনও সংস্থার নিয়মকানুন সম্পর্কে আপনাকে ওয়াকিবহাল হতে হবে এবং সেই নিয়মকানুনগুলো যাতে আপনার জানা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ, সামাজিক ক্ষেত্রে বা অন্যান্য জায়গায় এমন কাজ খুঁজতে হবে যেখানে নিয়ন্ত্রণ অনেক শিথিল থাকে। এক্ষেত্রে সহজ উপায় হল এমন কাজ করা যেখানে অনেক বৈচিত্র রয়েছে। কারণ সামাজিক ক্ষেত্রে কাজ করলে সংস্থার কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীদের মধ্যে মানুষের বিশেষ চাহিদাগুলোর বিষয়ে সচেতন থাকার সুযোগ থাকে।

  • যদি কাজের জায়গায় সততা বজায় রাখতে হয় তাহলে পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ হতে হবে। তবে এ বিষয়ে কিছু সতর্কতা রয়েছে। যেমন- সেই সব তথ্যই আদানপ্রদান করা উচিত যা খুব সহজভাবে আদানপ্রদান করা যায়। যদি কাউকে তার চিহ্নিত সমস্যার কথা অন্যান্যদের পুরো জানাতে হয় তাহলে সে যে একটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা অন্যদের কাছে খুলে বলতে হবে। সেই সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের জন্য সে নির্দিষ্ট কারোর সাহায্যও নিতে পারে। আর এভাবে সংস্থার অন্যান্য মানুষজন তাদের অসুস্থ সহকর্মীকে সাহায্য করার প্রস্তুতি নিতে পারে।

  • কর্মক্ষেত্রে নিজের অসুস্থতাজনিত সীমাবদ্ধতাগুলি সহকর্মী বা কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে কী বাধা আপনাকে অতিক্রম করতে হচ্ছে তা অন্যান্যদের বলতে হবে। আপনি আপনার দলের কাছ থেকে কী সাহায্য চাইছেন, সে কথা জানাতে হবে। এসব তথ্যের মাধ্যমে অফিসের কর্তৃপক্ষ ও সহকর্মীদের মনে আপনার অসুস্থতার বিষয়ে একটা পরিষ্কার ধারণা জন্মানো সম্ভব।

  • কাজের ক্ষেত্রে নমনীয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এবং দেখতে হবে যে কাজ আপনি করছেন তা আপনার জন্য সঠিক না বেঠিক হচ্ছে।

  • নিজের শারীরিক ও মানসিক যত্ন নেওয়া একান্ত জরুরি। দৈনন্দিন কাজের তালিকায় শরীরচর্চা অর্ন্তভুক্ত করতে হবে ও চাপমুক্ত কাজ করতে হবে।

  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রয়োজনীয় থেরাপির ব্যবস্থা করা। এর সাহায্যে লম্বা ছুটির পরে কাজে যোগ দেওয়ার চাপ যেমন সামলানো যায়, তেমনই কাজ চলাকালীন যে কোনও সমস্যার সমাধানও করা যায়। যদি সম্ভব হয় তাহলে থেরাপির সঙ্গে মানানসই কাজের রুটিনের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। আর যদি সম্ভব না হয় তাহলে কাজ বজায় রেখে কী করে নিয়মিত থেরাপি চালানো যায়, তা নিয়ে থেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।

যখন আপনি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবেন তখন নীচের বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি-

  • ইন্টারভিউ মানে শুধু নিজের সম্পর্কে সংস্থাকে জানানো নয়। সেই সঙ্গে সংস্থার বিষয়েও জানা প্রয়োজন। চাকরিপ্রার্থী হিসেবে আপনি কী চাইছেন - সে বিষয়টি প্রশ্ন ও উত্তরের মধ্য দিয়ে জেনে নিলে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে ওই চাকরিটা  আপনি করবেন কিনা।

  • নিজের চ্যালেঞ্জগুলো খুব সতর্ক ও খোলাখুলিভাবে বলতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে  নিজের অতীত অবদানের কথা জানাতে হবে। এর ফলে সংস্থার কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারবে যে চাকরিপ্রার্থী এখন কাজের ক্ষেত্রে কীরকম অবদান রাখতে পারবে।

  • পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সাহায্য পাওয়া জরুরি। পরিবারের সেই সদস্যকে চিহ্নিত করতে হবে যিনি আপনার দুঃসময়ে আপনাকে চাঙ্গা রাখতে পারে বা মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়তে দেয় না।

  • প্রথম সুযোগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। বরং সঠিক সুযোগের জন্য অপেক্ষা করা জরুরি। কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করার আগে তার মূল্যায়ন করা একান্ত প্রয়োজন।   

Related Stories

No stories found.
logo
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন
bengali.whiteswanfoundation.org