ভারতে থেরাপিস্টরা কি কোনও নীতি বা নিয়মাবলী মেনে চলেন?
সারা বিশ্বে বহু দেশেই কিছু নীতি বা নিয়মাবলি রয়েছে যা যে কোনও কাউন্সেলর বা থেরাপিস্টকে আবশ্যিক ভাবে মেনে চলতে হয়। এই নীতি নিয়মাবলী চিকিৎসক ও রোগী, উভয়কেই মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে, যা:
তাঁদের সম্পর্কের নিয়ম বলে দেয়
সেই সম্পর্কের সীমারেখা বেঁধে দেয়
দু’জনের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা বজায় রাখে
ভারতে এই ক্ষেত্রে কোনও আইন বা নিয়ন্ত্রণ রক্ষক নেই। অর্থাৎ যারা থেরাপিস্টের সাথে যোগাযোগ করেন, তাঁরা আদৌ জানেন না যে এই প্রসঙ্গে তাঁদের কী কী জানা উচিৎ।
হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন এই প্রসঙ্গে বোঝার জন্য কিছু চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করেছে।
গোড়ার কথাঃ
একটি হেল্পলাইন হিসেবে আমরা শুধুমাত্র আমাদের ক্লায়েন্টের সাথে প্রযুক্তির মাধ্যমেই যোগাযোগ করতে পারি। আমরা রোগ নির্ণয় বা পরীক্ষা বা পরামর্শ দিতে পারি না। আমরা বড়জোর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এমন কারও সাথে যোগাযোগ করতে বলব, যিনি সাহায্য করতে সক্ষম। সেই অনুযায়ী আমরা তাঁকে সরাসরি সাহায্যের জন্য - থেরাপিস্ট, স্পেশাল সেল, আইনি সাহায্য, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেব।
তনুজা বাবরে, প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট, আইকল সাইকোলজিকাল হেল্পলাইন, মুম্বই
যেটা মেনে নেওয়া চলবে না:
যদি প্রথম কিছু মোলাকাতেই থেরাপিস্ট আপনাকে চট জলদি সারিয়ে তোলার উপায় বাৎলে দিতে চান, তাহলে সতর্ক হন। একজন থেরাপিস্ট সময় নিয়ে আপনার সাথে কথা বলে তবে পুরো পরিস্থিতিটা বোঝেন এবং সেই মত সমাধানের রাস্তা দেখান।
আপনাকে যদি তিনি কী করতে হবে সেটা বলে দিতে চান বা উপদেশ দেন।
যদি তিনি আপনাকে দোষ দেন, সমালোচনা করেন বা আপনার কথা শুনে আপনাকে অপমান করেন।
আপনার অনুমতি ছাড়াই আপনার কথাবার্তা সম্বন্ধে আপনার পরিবার বা বন্ধুদেরকে জানিয়ে দেওয়া।
আপনি যদি থেরাপির সাহায্য নিতে চান, তাহলে উপরোক্ত কথাগুলি মাথায় রাখুন। যদি আপনি দেখেন আপনার থেরাপিস্ট অন্য কিছু করার চেষ্টা করছেন তাহলে তাঁর সাথে সেই বিষয়ে আলোচনা করুন।
পাশাপাশি আপনাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে। যে আপনি সঠিক থেরাপিস্টকে বেছেছেন কি না।
আপনি কি তাঁর সাথে মন খুলে কথা বলতে পারছেন? (অনেক সময় আলাপ জমতে কয়েকটা সেশন লাগে)
আপনার কি মনে হচ্ছে যে তিনি মন দিয়ে আপনার কথা শুনছেন?
যে কোনও পর্যায়, আপনার যখনই অস্বস্তি বোধ হবে, আপনি নির্ভয়ে আপনার থেরাপিস্টের কাছে জবাবদিহি চাইতে পারেন। তিনি যেটা করছেন, সেটা কেন করছেন, এটা জানা আপনার অধিকার। যদি অস্বস্তি বাড়তে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে যে আপনাদের সম্পর্ক এবং চিকিৎসার উপকারিতার মূল্যায়নের সময় এসে গিয়েছে।
মেডিকেল লিভের নামে ছুটি কাটিয়ে অফিস ফেরৎ যাওয়ার লোভে অনেকেই আমার কাছে বায়না করেন। কিন্তু আমি কখনই ভুয়ো কাগজপত্রের দায়িত্ব নেই না (অনেক ক্ষেত্রেই আমাকে প্রথম সেশনেই রিপোর্ট লিখে দিতে বলা হয়েছে, অথবা এমন কাউকে দেখেছি বলে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে যার চেহারাই দেখিনি)। একজন থেরাপিস্টের নিজের সুনামের খাতিরেই তাঁর এই রকমের কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। একজন মনোবিদ হিসেবে আপনি যেটুকু কাজ করেছেন, ঠিক ততটাই রিপোর্টে লিখবেন।
ডা: দিব্যা কণ্ণন, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, বেঙ্গালুরু
একজন থেরাপিস্ট হিসেবে এবং অনলাইনে কাউন্সেলিং করার খাতিরে আমি ভালই বুঝি যে কিসে আমি মাথা গলাব আর কিসে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে, যেমন স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতন সমস্যায়, সরাসরি চিকিৎসা, ওষুধ এবং অন্যান্য সাহায্য প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আমায় স্পষ্ট করে বলে দিতে হয় যে অনলাইনে পরামর্শ দিয়ে কোনও লাভ হবে না। আমার নিজের গণ্ডিতে আবদ্ধ থেকে প্রয়োজন মতন অন্য কোনও চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে বলে দেই।
শেহেরাজাদি শিওভান, মনোবিদ, দ্য টকিং কম্পাস